Pride of North Bengal: বাংলার রান্নাঘরে ইলিশের রাজত্ব সর্বজনবিদিত। কিন্তু উত্তরবঙ্গের অরণ্যে লুকিয়ে রয়েছে এক রত্ন, যা ইলিশের স্বাদেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে। সেই রত্নটি হল বোরোলি মাছ।
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলেই বোরোলি মাছের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উত্তরবঙ্গের অভয়ারণ্য, কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিস্তার সঙ্গেই একযোগে যে নাম উচ্চারণ হয়, তা উত্তরবঙ্গের নদীর রুপোলি শস্য-বোরোলি। ভালবেসে কেউ কেউ তার নাম রেখেছে ‘তিস্তার ইলিশ’।
বোরোলি কেন এত বিশেষ? (Pride of North Bengal)
স্বাদে অতুলনীয়: ইলিশের সঙ্গে আকারে পাত্তা না পেলেও, রংয়ে, স্বাদে মন জয় করে নিতে পারে এই রুপোলি সুন্দরীরা। সর্ষে দিয়ে বোরোলির পাতুরি কিংবা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে সবজে রঙের ঝোল জিভে জল আনে।
প্রাকৃতিক বাসস্থান: বোরোলি মাছ মূলত উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি নদীর অববাহিকায় পাওয়া যায়। তিস্তা, তোর্সা, করলা, রায়ডাক, বালাসন, কালজানি— এই নদীগুলোর পরিষ্কার জলেই বোরোলি সবচেয়ে ভালো জন্মে।
অক্সিজেন প্রেমী: বোরোলি মাছকে বলা হয় অক্সিজেন প্রেমী। পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর জলে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন থাকে, যা বোরোলির বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
দূষণের প্রতি সংবেদনশীল: বোরোলি মাছ খুব সুখী। জল একটু নোংরা হলে তো আর দেখা পাওয়া যাবে না। চা বাগানগুলোতে কীটনাশক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় নদীর জল দূষিত হচ্ছে, ফলে বোরোলির সংখ্যাও কমছে।
বোরোলির ভবিষ্যৎ কেমন?
দশ বছর আগেও বর্ষার ঠিক আগে এবং বর্ষার পরে বাজারে বোরোলি ভালই উঠত। কিন্তু এখন বোরোলির পরিমাণ তার চেয়ে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। নদীতে ব্যারাজ নির্মাণ, জলের স্রোত কমে যাওয়া, দূষণ বৃদ্ধি— এই সব কারণে বোরোলির অস্তিত্বই হুমকির মুখে।
আমাদের দায়িত্ব
বোরোলি মাছকে বাঁচাতে হলে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নদীকে পরিষ্কার রাখা, দূষণ রোধ করা, অতিমাত্রায় মাছ ধরা বন্ধ করা— এই সব কাজ মিলেই আমরা বোরোলি মাছকে বাঁচাতে পারব।
উপসংহার
উত্তরবঙ্গের এই রত্নকে বাঁচানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। আসুন, আমরা সবাই মিলে বোরোলি মাছকে বাঁচাতে কাজ করি।
আরও পড়ুন: হাড়জোড়: এক আয়ুর্বেদিক নিধান