Uric Acid: বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজ ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগছেন। এটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম গাঁটে ব্যথা, কিডনির সমস্যা ও প্রস্রাবজনিত অসুবিধা। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, একবার ইউরিক অ্যাসিড ধরা পড়লে কি আজীবন ওষুধ খেতে হবে? চিকিৎসকদের মতে, নিয়ম মেনে জীবনযাত্রা পালন করলে এবং কিছু বিশেষ ভেষজ পানীয় গ্রহণ করলে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ইউরিক অ্যাসিড কেন বাড়ে? (Uric Acid)
ইউরিক অ্যাসিড মূলত শরীরে পিউরিন নামক প্রাকৃতিক যৌগের ভাঙন থেকে তৈরি হয়। কিছু নির্দিষ্ট খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে অথবা কিডনি যদি এই অ্যাসিড ঠিকমতো প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে না পারে, তাহলে এটি শরীরে জমতে থাকে। এর ফলে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, পেশীতে শক্ত ভাব এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
বেশি মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ, মাংস, ডাল, মদ্যপান এবং ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে। তাই এই পরিস্থিতিতে কিছু ভেষজ পানীয় খাওয়ার পরামর্শ দেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে কার্যকরী ভেষজ পানীয়
১. গুলঞ্চের চা
গুলঞ্চ বা গিলয় বহু যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি রক্ত পরিশোধন করে এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
কীভাবে তৈরি করবেন?
- গুলঞ্চ গাছের পাতা ও ডাল কেটে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে এগুলো গুঁড়িয়ে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন।
- এরপর ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে পান করুন।
এটি নিয়মিত খেলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমতে পারবে না এবং গাঁটের ব্যথা কমবে।
২. ত্রিফলা চা
ত্রিফলা তিনটি শক্তিশালী ভেষজ উপাদান— আমলকি, হরিতকি ও বহেরার মিশ্রণ। এটি দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, লিভার সুস্থ রাখে এবং শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় টক্সিন দূর করে।
কীভাবে তৈরি করবেন?
- এক চামচ ত্রিফলা গুঁড়ো এক কাপ গরম পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে খালি পেটে সেই জল পান করুন।
- এছাড়া, এক কাপ জলে এক চামচ ত্রিফলা গুঁড়ো দিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে পান করতে পারেন।
ত্রিফলা নিয়মিত খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে এবং কিডনির কার্যকারিতা বাড়ে।
৩. নিম-তুলসীর রস
নিম ও তুলসী দুটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা শরীরকে ডিটক্স করতে সক্ষম। এগুলো শরীরে প্রদাহ কমায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং লিভার ও কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
কীভাবে তৈরি করবেন?
- এক মুঠো নিম ও তুলসী পাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।
- এক কাপ পানিতে ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে ঠান্ডা করুন।
- ছেঁকে নিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন।
এই পানীয়টি শরীরের অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কমিয়ে দেয় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৪. ধনে ভেজানো জল
ধনে ভেজানো জল পান করলে শরীরের বিপাকক্রিয়া উন্নত হয়, কিডনির কার্যকারিতা ভালো হয় এবং ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কীভাবে তৈরি করবেন?
- এক চামচ ধনের বীজ এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে সেই জল ছেঁকে খালি পেটে পান করুন।
এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখার অতিরিক্ত কিছু পরামর্শ (Uric Acid)
শুধু ভেষজ পানীয় খেলেই হবে না, পাশাপাশি জীবনযাত্রাতেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
✅ সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন:
- উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার (লাল মাংস, মুসুর ডাল, সামুদ্রিক মাছ) পরিহার করুন।
- বেশি শাকসবজি ও ফল খান।
✅ প্রচুর জল পান করুন
- ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বের করে দিতে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন।
✅ নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।
✅ অ্যালকোহল ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন
- অ্যালকোহল শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়, তাই এটি পরিহার করুন।
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা হলে প্রথমেই সচেতন হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়মিত এই ভেষজ পানীয় গ্রহণ করলে ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা কমতে পারে এবং শরীর সুস্থ থাকবে। তবে, কারও যদি দীর্ঘদিন ধরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: খেজুর: প্রকৃতির দান, স্বাস্থ্যের উপহার