Rheumatoid arthritis: রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য আশার খবর! ভারতের পাঞ্জাবের মোহালির ইনস্টিটিউট অফ ন্যানো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা দাবি করেছেন, তাঁরা এমন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন, যা ওষুধকে সরাসরি ব্যথার স্থানে পৌঁছে দেবে। এই নতুন গবেষণা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী দিক উন্মোচন করতে পারে।
নতুন আবিষ্কারের বিশেষত্ব (Rheumatoid arthritis)
রোগের নিরাময়ের জন্য ওষুধ প্রয়োগ করলেও অনেক সময় তা শরীরের সুস্থ কোষগুলোর ক্ষতি করে। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ওষুধগুলোরও রয়েছে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সাধারণত ওষুধ খাওয়া হলে বা ইনজেকশন হিসেবে শরীরে প্রবেশ করালে, তা গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক সময় ব্যথার স্থানে পৌঁছানোর আগেই তার কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
এই সমস্যার সমাধানে মোহালির গবেষক দল একটি বিশেষ ধরণের ‘মাইক্রোস্ফিয়ার’ তৈরি করেছেন, যা ওষুধকে সঠিক স্থানে পৌঁছে দেবে। এটি মূলত পলিমার-লিপিড দিয়ে তৈরি একটি আধার, যেখানে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের জনপ্রিয় ওষুধ ম্যাথোট্রেক্সেট রাখা হবে। এই আধারটি শরীরের প্রদাহযুক্ত স্থানে গিয়ে ওষুধটি মুক্ত করবে, ফলে পাশের সুস্থ কোষগুলোর উপর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে না।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস কী?
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস হল একটি দীর্ঘস্থায়ী অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে অস্থিসন্ধির স্বাস্থ্যকর কোষগুলোর উপর আক্রমণ চালায়। এর ফলে অস্থিসন্ধির আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হাড়ের ক্ষয় ঘটে এবং ধীরে ধীরে চলাচলের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- গাঁটের ব্যথা ও ফোলা
- সকালে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থিসন্ধিতে শক্তভাব অনুভূত হওয়া
- হাঁটু, কবজি, আঙুল, গোড়ালি প্রভৃতি জায়গায় ব্যথা
- গাঁটের গঠনে পরিবর্তন ও চলাচলের সীমাবদ্ধতা
রোগের তীব্রতা বাড়লে হৃদরোগ, ফুসফুসের জটিলতা, চোখের সমস্যা ও ত্বকের প্রদাহের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক ও কার্যকরী চিকিৎসার বিকল্প নেই।
Rheumatoid arthritis -গবেষণার বিস্তারিত তথ্য
গবেষক রাহুল কুমার বর্মার নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, পলিমার-লিপিড আবৃত মাইক্রোস্ফিয়ার ব্যবহার করলে ওষুধ শরীরের প্রদাহযুক্ত অংশ সনাক্ত করে সরাসরি সেখানে পৌঁছে যায়। অনেকটা ডাকপিয়নের মতো নির্দিষ্ট ঠিকানায় ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার মতোই কাজ করে এটি।
গবেষকদের মতে, নতুন এই পদ্ধতির মাধ্যমে:
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো সম্ভব হবে – যেহেতু ওষুধটি শুধুমাত্র ব্যথার স্থানে কাজ করবে, তাই সুস্থ কোষগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না।
- দ্রুত আরাম পাওয়া যাবে – সাধারণ ওষুধের তুলনায় এই প্রযুক্তি দ্রুত প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
- নিম্নমাত্রার ওষুধ ব্যবহার করা সম্ভব হবে – ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকায়, কম মাত্রার ওষুধেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
- অন্য জটিল রোগের সম্ভাবনা কমবে – লিভার, কিডনি ও পাকস্থলীর উপর ওষুধের চাপ কমবে, ফলে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতাও কমতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সুব্রত গড়াই বলেন, “রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় সাধারণত দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়— খাওয়ার ওষুধ ও ইনজেকশন। ম্যাথোট্রেক্সেট অন্যতম কার্যকরী ওষুধ হলেও এটি শরীরের অন্য অংশেও প্রভাব ফেলে। কিন্তু যদি নতুন এই গবেষণা সফল হয় এবং ওষুধ সরাসরি প্রদাহের স্থানে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে এটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে।”
তিনি আরও বলেন, “এখনও পর্যন্ত এই গবেষণা পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ। চার ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফল হলে এটি বাস্তব জীবনে ব্যবহার করা যাবে। তবে এখনই বলা যায়, এটি রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস চিকিৎসার ভবিষ্যৎকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে পারে।”
আগামী দিনের সম্ভাবনা
এই গবেষণাটি বর্তমানে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। গবেষকদের মতে, এটি যদি মানবদেহে সফলভাবে কাজ করে, তাহলে ভবিষ্যতে ক্যান্সার, স্নায়ুরোগ ও অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায়ও একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস এমন একটি রোগ যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ব্যথা ও চলাচলের অসুবিধার কারণে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। এই নতুন প্রযুক্তি রোগীদের দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি দিতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী পরিবর্তন যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। এখন শুধু অপেক্ষা, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলের জন্য।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো জটিল রোগের চিকিৎসায় নতুন উদ্ভাবন নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মোহালির বিজ্ঞানীদের তৈরি এই প্রযুক্তি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি শুধু রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস নয়, আরও অনেক কঠিন রোগের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই গবেষণা এক নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। এখন সময়ের অপেক্ষা, কবে এই পদ্ধতি চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাস্তবে রূপ নেয়।
আরও পড়ুন: ভারতের অনবদ্য জয়: মেয়েদের ও পুরুষদের বিভাগে নেপালের বিরুদ্ধে শ্রেষ্ঠত্ব বজায়
[…] […]