Welcoming Rituraj Basant: শিল্প, সংস্কৃতি এবং স্বাস্থ্যসেবার একটি সুরেলা সংমিশ্রণে, প্রস্তাবিত ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেতনায় অনুপ্রাণিত একটি রূপান্তরমূলক যাত্রা শুরু করেছে। সৃজনশীলতা এবং সামগ্রিক মঙ্গলকে আলিঙ্গন করার একটি প্রতীকী অঙ্গভঙ্গিতে, প্রতিষ্ঠানটি ঋতুরাজ বসন্তকে একটি উষ্ণ আমন্ত্রণ জানিয়েছে, একটি প্রাণবন্ত উদযাপনের মঞ্চ তৈরি করেছে।
ঋতুরাজ বসন্ত, একটি শ্রদ্ধেয় ঐতিহ্য যা বসন্তের আগমনের সূচনা করে, নবায়ন ও নবজীবনের সারবত্তাকে মূর্ত করে। অনেকটা দীর্ঘ শীতের পরে ফুল ফোটার মতো, এটি জীবন এবং জীবনীশক্তির জাগরণকে নির্দেশ করে। কবিতা, সঙ্গীত, নৃত্য এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে, ঋতুরাজ বসন্ত পরিবর্তিত ঋতুর আনন্দ এবং সৌন্দর্যকে আচ্ছন্ন করে, যা ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের নীতির সাথে গভীরভাবে অনুরণিত হয়।
এই উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিশ্রুতি যে শুধুমাত্র ব্যক্তিদের শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, তাদের মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতাও লালন করা। ঋতুরাজ বসন্তের সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যকে আলিঙ্গন করে, প্রতিষ্ঠানটি একটি নিরাময় পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করে যা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিকে অতিক্রম করে।
আগরতলা, মার্চ ২০ঃ
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনায় ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতে উদ্যোগ নিয়েছে প্রস্তাবিত ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এই উপলক্ষ্যে ‘বসন্ত উৎসব’ ও ‘ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেলা’-র আয়োজন করা হয়েছে।
স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতা নিয়ে ও তাদের সঙ্গেই নিয়ে উৎসব পালন ও এই মেলার উদ্যোগ নিয়েছে প্রস্তাবিত ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কতৃপক্ষ। (Welcoming Rituraj Basant)
ত্রিপুরার সাথে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ঠাকুর পরিবারের সুদীর্ঘ সম্পর্ক। যা নিবিড় হয় ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্যের সময় থেকে। ইতিহাস বলছে, তরুণ বয়সে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ভগ্নহৃদয়’ কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রথম অভিনন্দন পেয়েছিলেন ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্যের কাছ থেকে। ১২৮৯ বঙ্গাব্দে মহারাজা বীরচন্দ্রের প্রধানা মহিষী ভানুমতী দেবীর জীবনাবসান ঘটে। শোকসন্তপ্ত হৃদয়ে রাজা তখন বিরহের কবিতা লিখে লিখে শোকভার লাঘব করার চেষ্টা করছিলেন, ঠিক এই সময়েই মহারাজার হাতে আসে তরুণ কবি রবীন্দ্রনাথের ‘ভগ্নহৃদয়’।
এই কাব্যগ্রন্থটি হাতে পেয়ে তিনি যেন বিরাট আশ্রয় পেলেন। ‘ভগ্নহৃদয়’ পাঠের পর পরই মহারাজ বীরচন্দ্র তাঁর নিজস্ব সচিব শ্রদ্ধেয় রাধারমন ঘোষ মহাশয়কে কলকাতার জোডড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে পাঠালেন কবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার জন্য। মুগ্ধ মহারাজ বীরচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে ভূষিত করেন ‘কবি’ উপাধিতে। রবীন্দ্রনাথের জীবনে এই প্রথম ‘কবি’ স্বীকৃতি লাভ। সেই প্রথম কোন খেতাবপ্রাপ্তি। জীবনে প্রথম সম্মান লাভের সঙ্গে সঙ্গে ‘ত্রিপুরা’ শব্দটি সেদিন থেকে রবীন্দ্রনাথের অন্তরে গেঁথে যায়। যুবক রবীন্দ্রনাথের প্রতিভাকে সেদিন শুধু ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য আবিষ্কার করেছিলেন। সেই সূত্র ধরে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রায় ৬০ বছরের সম্পর্ক ছিল ত্রিপুরার। মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য থেকে শুরু করে তার প্রপৌত্র মহারাজা বীরবিক্রম-ত্রিপুরার এই চার রাজার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সুসম্পর্ক ছিল। যার জন্য একাধিকবার ত্রিপুরায় এসেছেন তিনি।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ত্রিপুরার এই গভীর সম্পর্ককে স্মরণে রেখেই রবীন্দ্র ভাবনায় বসন্ত উৎসব ও মেলার আয়োজনের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পক্ষ থেকে ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে বসন্ত উৎসব পালনের জন্য আগামী ২৫শে মার্চ ২০২৪ সোমবার মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গন থেকে সকাল ৯ টায় বর্ণাঢ্য প্রভাত ফেরীর মাধ্যমে এই উৎসবের সূচনা হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় হস্তশিল্প ও হস্তশিল্পীদের উৎসাহ দিতে তাদের নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরেই ‘ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেলা’-র আয়োজন করা হচ্ছে। অংশগ্রহনে আগ্রহী সকলকেই কলেজে এসে যোগাযোগ করতে পারেন।
কলেজ সুত্রে জানা গেছে ইতিমধ্যেই তারা স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে বসন্ত উৎসবে অংশ নেবার বিষয়ে কথা বলা শুরু করছেন। কলেজ সংলগ্ন গ্রামের মানুষেরা ইতিমধ্যেই এই উৎসবে যোগ দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে প্রতি বছরই সকলের সহযোগিতায় এই উৎসব পালনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বসন্ত উত্সব, উত্সবের অংশ হিসাবে কল্পনা করা হয়েছে, শিল্পী, অভিনয়শিল্পী এবং উত্সাহীদের একত্রিত হয়ে জীবনের স্পন্দন উদযাপন করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে। ঐতিহ্যবাহী লোক পরিবেশনা থেকে সমসাময়িক শৈল্পিক অভিব্যক্তি, উত্সবটি রঙ এবং শব্দের একটি ক্যালিডোস্কোপের প্রতিশ্রুতি দেয়, ইন্দ্রিয়গুলিকে মোহিত করে এবং কল্পনাকে প্রজ্বলিত করে।
বসন্ত উৎসবের পরিপূরক হল ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেলা, স্থানীয় কারুশিল্প, রন্ধনসম্পর্কিত আনন্দ এবং সাংস্কৃতিক শিল্পকর্মে ভরপুর একটি বাজার। এখানে, দর্শনার্থীরা ত্রিপুরার ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ট্যাপেস্ট্রিতে নিজেদের নিমজ্জিত করার, কারিগর এবং কারিগরদের সাথে জড়িত হওয়ার এবং আঞ্চলিক খাবারের স্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ পান। এটা শুধু একটা মার্কেটপ্লেস নয়; এটি সম্প্রদায় এবং ঐতিহ্যের একটি উদযাপন, যেখানে গল্পগুলি ভাগ করা হয় এবং সংযোগ জাল করা হয়৷
এই উদ্যোগের তাৎপর্য নিছক বিনোদন বা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বাইরেও প্রসারিত। এটি শিল্প, সংস্কৃতি এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে গভীর আন্তঃসম্পর্ককে আন্ডারস্কোর করে, সৃজনশীলতা এবং কল্যাণের প্রচারে অভিব্যক্তির ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয়। যেমনটি ঠাকুর বিখ্যাতভাবে বলেছেন, “সর্বোচ্চ শিক্ষা হল সেই শিক্ষা যা আমাদের কেবল তথ্যই দেয় না বরং আমাদের জীবনকে সমস্ত অস্তিত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে।”
ঋতুরাজ বসন্তকে খোলা বাহুতে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে, ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সমবেদনা, সহানুভূতি এবং সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার নীতিতে নিহিত সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। এটি নিরাময় এবং স্থিতিস্থাপকতা, সীমানা অতিক্রম এবং মানুষের আত্মাকে লালন করার ক্ষেত্রে শিল্প ও সংস্কৃতির রূপান্তরকারী শক্তির একটি প্রমাণ। (Welcoming Rituraj Basant)
আরো পড়ুন: স্যাটেলাইট ইন্টারনেট – ভারতে বিনামূল্যে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট!!