Positive বার্তা (বাংলা)

A teamwork initiative of Enthusiastic people using Social Media Platforms

Homeশিল্পোদ্যোগবিশ্রামগঞ্জ মিনি স্টেডিয়ামে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের উদ্যোগে দ্বিতীয় সরস মেলার শুভ...

বিশ্রামগঞ্জ মিনি স্টেডিয়ামে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের উদ্যোগে দ্বিতীয় সরস মেলার শুভ সূচনা

Saras Mela 2025: ত্রিপুরার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে বিভিন্ন গ্রামীণ উদ্যোগ এবং স্বাবলম্বী মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টা। এসব উদ্যোগের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হল ‘ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন’। এই মিশন গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে ‘সরস মেলা’ অন্যতম। সম্প্রতি, ত্রিপুরার বিশ্রামগঞ্জ মিনি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সরস মেলার শুভ সূচনা হয়, যা পুরো অঞ্চলবাসীর মধ্যে উৎসাহ ও আনন্দের সৃষ্টি করেছে।

মেলার উদ্বোধন করেন ত্রিপুরার মৎস্য মন্ত্রী সুধাংশু দাস। তিনি মেলার উদ্বোধনী দিনে প্রদীপ জ্বালিয়ে তিনদিনব্যাপী এই উৎসবের শুভ সূচনা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মাধ্যমে হাজার হাজার গ্রামীণ নারী আজ নিজেদের জীবিকা অর্জন করছে। তাদের তৈরিকৃত পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাচ্ছে এবং বাজারে ভালো দামও পাচ্ছে।” তিনি আরো বলেন, “সরস মেলা আমাদের গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক বিশাল সুযোগ, যেখানে তারা নিজেদের পণ্য প্রদর্শন করতে পারে এবং নিজের সম্ভাবনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।”

Saras Mela 2025 | Auspicious beginning of the second Mela organized by Tripura Rural Livelihood Mission at Bishramganj Mini Stadium

এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নানা পর্যায়ের কর্মকর্তারা, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, গ্রামীণ নারীরা, এবং দর্শকরা। মেলার উদ্যোক্তারা জানান, মেলায় শুধু ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থান থেকে নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্ব-সহায়ক দল ও স্বাবলম্বী মহিলাদের হাতে তৈরি পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। তাঁরা আরো বলেন, “এটি এক ধরনের ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গ্রামীণ নারীরা তাদের তৈরি পণ্য বাজারজাত করতে পারেন এবং নতুন সুযোগ লাভ করতে পারেন।”

মেলায় প্রদর্শিত পণ্য (Saras Mela 2025)

দ্বিতীয় সরস মেলায় প্রায় একশ’টিরও বেশি স্টল ছিল। এখানে গৃহস্থালী ব্যবহার্য সামগ্রী, শীতকালীন কাপড়, হস্তশিল্প, কুটির শিল্প, ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র, পাত্র-পাতিল, পিঠে-পুলি, খাদ্যসামগ্রীসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছিল। এই মেলা শুধু যে ব্যবসায়িক লেনদেনের কেন্দ্রস্থল তা নয়, এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও এক ভব্য স্থান। বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামীণ নারীরা তাঁদের নিজস্ব দক্ষতা ও সৃজনশীলতা দিয়ে তৈরি এসব পণ্য প্রদর্শন করছেন। মেলায় আসা দর্শকরা এই পণ্যগুলোর প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন।

এছাড়াও, মেলায় স্থানীয় কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত শাক-সবজি, ফলমূল এবং অন্যান্য কৃষি পণ্যও বিক্রি করছেন। স্থানীয় খাদ্যসামগ্রীর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী খাবার, যেমন- ‘খই’, ‘চাটনি’, ‘মিষ্টান্ন’, ‘পিঠে-পুলি’ ইত্যাদি। এসব খাবার মেলা ভ্রমণকারীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

মেলা উপলক্ষে একাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পীরা তাঁদের সংগীত, নৃত্য ও নাট্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করছেন। মেলা প্রাঙ্গণে ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত এবং নৃত্য প্রদর্শন করা হচ্ছে, যা দর্শকদের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা প্রদান করছে। এ ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুধু বিনোদনই নয়, স্থানীয় সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিশেষ করে, গ্রামীণ নারীরা যে সব হস্তশিল্প ও সৃজনশীল কাজগুলো তৈরি করেন, তা মেলায় প্রদর্শন করার মাধ্যমে তাদের প্রতিভা প্রকাশিত হচ্ছে। এসব নারীরা তাঁদের তৈরি পণ্যগুলির মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হচ্ছেন। মেলায় তাঁদের উপস্থিতি থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, গ্রামীণ জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার জন্য এই ধরনের উদ্যোগ কতটা কার্যকর।

ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের ভূমিকা

ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন (TGLM) মূলত একটি সামাজিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন এবং তাঁদের জীবিকার উন্নতি সাধন। মিশনটির আওতায় বিভিন্ন স্ব-সহায়ক দল (SHG) গঠন করা হয়েছে, যেখানে মহিলারা একত্রিত হয়ে পণ্য উৎপাদন, ব্যবসা এবং বিপণন সংক্রান্ত কাজ করে থাকেন।

মিশনটি গ্রামীণ নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য করছে। মেলার মাধ্যমে এই নারীদের কাজকে একটি বৃহত্তর জনমুখী মঞ্চে তুলে ধরা হয়, যেখানে তারা তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারে এবং নিজেদের উৎপাদনশীলতার জন্য আরো বেশি সুযোগ লাভ করতে পারে।

মিশনটির উদাহরণস্বরূপ, ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকার মহিলারা জামদানি, কাঁথা-সেলাই, মাটির পণ্য, কাঠের কাজ, বাঁশের তৈরি পণ্য এবং অন্যান্য কারুকাজ তৈরির মাধ্যমে নিজেদের জীবিকা অর্জন করছেন। এসব পণ্য বিক্রি করা ছাড়াও তারা একটি শক্তিশালী সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছেন, যা তাদের জীবনে এক নতুন দিশা নিয়ে আসছে।

সামাজিক অর্থনৈতিক প্রভাব (Saras Mela 2025)

এই ধরনের মেলা শুধু যে নারীদের জন্য ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি করছে তা নয়, এটি পুরো এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ নারীদের উদ্যোগে স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি, গ্রামীণ এলাকাগুলোর মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে এবং তাঁরা বুঝতে পারছেন যে, শুধু কৃষির উপর নির্ভরশীল না থেকে অন্য কোনও শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনও সম্ভব।

এছাড়া, মেলা একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে, যা স্থানীয় শিল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে। এতে করে সাধারণ মানুষও এই গ্রামীণ উদ্যোগগুলো সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক মনোভাব গড়ে উঠছে।

উপসংহার

ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের উদ্যোগে দ্বিতীয় সরস মেলার শুভ সূচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত। এই মেলা শুধু যে স্ব-সহায়ক দলের মহিলাদের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম প্রদান করছে তা নয়, এটি ত্রিপুরার গ্রামীণ উন্নয়নে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করছে। মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রদর্শিত পণ্যের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি সমাজে নারীদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরছে।

এই ধরনের উদ্যোগ, যে শুধুমাত্র নারীদের ক্ষমতায়ন নয়, পুরো সমাজের জন্য এক নতুন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সৃষ্টি করতে পারে, তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে এই মেলার মাধ্যমে।

আরও পড়ুন: শিশুর শেখার ভিত্তি: বাবা-মায়ের আচরণই বড় শিক্ষাকেন্দ্র

Join Our WhatsApp Group For New Update
RELATED ARTICLES

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়