Positive বার্তা (বাংলা)

A teamwork initiative of Enthusiastic people using Social Media Platforms

Homeস্বাস্থ্যশিশুর শেখার ভিত্তি: বাবা-মায়ের আচরণই বড় শিক্ষাকেন্দ্র

শিশুর শেখার ভিত্তি: বাবা-মায়ের আচরণই বড় শিক্ষাকেন্দ্র

Children Imitate Parents: পারিবারিক অনুষ্ঠানে চরম অস্বস্তিতে পড়লেন অনন্যা। চার বছরের মেয়ে সকলের সামনে এমন এক কথা বলে দিল, যা শুনে হতবাক সবাই! অথচ অনন্যা ভুলেই গিয়েছিলেন যে, একদিন স্বামীর সঙ্গে সেই বিষয়ে কথোপকথন করেছিলেন। এই ঘটনার পর তিনি উপলব্ধি করলেন, শিশুরা বাবা-মায়ের প্রতিটি কথা, আচরণ, অভ্যাস গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং সেগুলি নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুরা সবচেয়ে বেশি শেখে তাদের পরিবারের কাছ থেকে। তাই বাবা-মায়ের আচরণ, কথা বলার ধরন, মূল্যবোধ ও অভ্যাসই শিশুর ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তোলে। কিন্তু কীভাবে শিশুর মধ্যে ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব? কীভাবে অভিভাবকরা তাদের আচরণে নজর দিয়ে সন্তানের মধ্যে সঠিক শিক্ষা প্রদান করবেন? এই প্রতিবেদন সেই দিকগুলিকে নিয়েই বিশদ আলোচনা করবে।

শিশুর শেখার পদ্ধতি: অনুকরণই প্রধান

মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলেন, “শিশুরা প্রাকৃতিকভাবেই অনুকরণপ্রবণ। তারা বাবা-মায়ের প্রতিটি কাজ পর্যবেক্ষণ করে এবং তা অনুসরণ করার চেষ্টা করে। এটি ইতিবাচক দিক যেমন তৈরি করতে পারে, তেমনই নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে। অভিভাবকরা যদি সচেতন না থাকেন, তাহলে সন্তানের মনে অজান্তেই কিছু অনভিপ্রেত অভ্যাস তৈরি হয়ে যেতে পারে।”

এই কারণে বাবা-মায়ের উচিত শিশুর সামনে ইতিবাচক আচরণ বজায় রাখা, যাতে তারা সঠিক মূল্যবোধ আয়ত্ত করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর শেখার ভিত্তি মজবুত করতে অভিভাবকদের নিজেদের কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি।

শিশুর শেখার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের করণীয়

১. নিজের কাজ নিজে করা

একজন শিশুর মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতার বীজ বপন করতে চাইলে, তাকে ছোট থেকেই নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু এই শিক্ষা শুধু মুখে বললেই হবে না, বরং বাবা-মাকেও একইভাবে নিজেদের কাজ করতে হবে।

অনেক পরিবারে দেখা যায়, শুধুমাত্র মা-ই ঘরের সব কাজ সামলান, আর অন্যরা শুধু আদেশ দিয়ে যান। আবার এমনও পরিবার আছে, যেখানে বাবা-মা দু’জনেই সমানভাবে ঘরের কাজে হাত লাগান। এই দ্বিতীয় ধরনের পরিবারে বড় হওয়া শিশু ছোট থেকেই শিখে ফেলে যে, প্রত্যেকেরই নিজেদের দায়িত্ব পালন করা উচিত।

২. সম্মানের শিক্ষা দেওয়া

শিশুরা কীভাবে কথা বলবে, কীভাবে অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে বাবা-মায়ের উপর। পরিবারের সদস্যদের প্রতি বাবা-মায়ের ব্যবহারের ধরন শিশু মনোযোগ দিয়ে দেখে এবং তা অনুসরণ করে।

যদি বাবা-মা পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখান, দাদু-দিদা বা কাকু-কাকিমার সঙ্গে সৌজন্য বজায় রেখে কথা বলেন, তাহলে শিশুও একইভাবে বড়দের সম্মান করতে শিখবে। অন্যদিকে, যদি বাবা-মা রুক্ষ ভাষায় কথা বলেন বা পরিবারের অন্যদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করেন, তবে শিশুও সেটাই শিখবে।

এমনকি বাড়ির গৃহপরিচারিকা থেকে শুরু করে অতিথিদের প্রতি কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, শিশুর মনে সেটিরও গভীর প্রভাব পড়ে। তাই চাইলে নয়, অভিভাবকদের উচিত নিজেদের আচরণ পরিবর্তন করেই শিশুকে সঠিক সম্মানের পাঠ দেওয়া।

৩. পড়াশোনার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করা

শিশুকে পড়াশোনা করতে বাধ্য করলেই যে সে আগ্রহ পাবে, তা নয়। বরং বাবা-মা নিজেরাই যদি বই পড়েন, তাহলে সন্তানও বইয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।

অনেক সময় বাবা-মায়েরা সন্তানকে পড়ার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে নিজেরা টিভি বা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে শিশু মনে করে, পড়াশোনা করা কেবল তার জন্যই, বাবা-মায়ের জন্য নয়। এর পরিবর্তে, যদি শিশুর পড়ার সময় বাবা বা মা তার পাশে বসে নিজেও বই পড়েন, তাহলে সে সহজেই বুঝতে পারবে পড়াশোনার গুরুত্ব।

গল্পের মাধ্যমে শিক্ষণীয় বিষয় শেখানোও খুব কার্যকরী। রাতে ঘুমানোর আগে গল্প পড়ে শোনালে শিশুর কল্পনাশক্তি যেমন বাড়ে, তেমনই তার শেখার আগ্রহও জন্মায়।

৪. অবসর কাটানোর পদ্ধতি

বর্তমান সময়ে মোবাইল আসক্তি শিশুদের জন্য বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুকে এই আসক্তি থেকে দূরে রাখতে হলে অভিভাবকদেরই আগে মোবাইল ব্যবহারে সংযমী হতে হবে।

মনোবিদরা বলছেন, “যদি বাবা-মা সন্তানকে সময় না দিয়ে সারাক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনে ডুবে থাকেন, তাহলে শিশুও সেটাই শিখবে।” তাই অবসরে মোবাইল ব্যবহারের পরিবর্তে, শিশুদের সঙ্গে গল্প করা, ছবি আঁকা, খেলাধুলার মতো কার্যকলাপে যুক্ত হওয়া উচিত।

শিশুকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত করানোও গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পার্কে খেলা করানো, গাছের পরিচর্যা শেখানো, পাখির ডাক শোনানো—এ ধরনের অভ্যাস শিশুকে মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

অভিভাবকদের করণীয়: সচেতনতা ও ধৈর্য

শিশুর শেখার ভিত্তি তৈরি করতে হলে অভিভাবকদের উচিত ধৈর্য সহকারে কাজ করা। ছোটদের শাসন করার বদলে বোঝানোর কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, “সন্তানকে যা শেখাতে চান, তা আগে নিজে অনুসরণ করুন। কারণ শিশুরা শুধু কথা নয়, অভ্যাস দেখেও শেখে।” তাই বাবা-মায়ের উচিত নিজেদের আচরণ ও অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন থাকা, যাতে শিশুর মননে ইতিবাচক মূল্যবোধ তৈরি হয়।

শিশুর শৈশবই তার ভবিষ্যতের ভিত্তি। তাই অভিভাবকদেরই সচেতনভাবে সঠিক আচরণ অনুসরণ করে তাদের শেখার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাবা-মায়ের আচরণ, মূল্যবোধ ও প্রতিদিনের অভ্যাসই শিশুদের বড় শিক্ষা দেয়। তাই শিশুকে কী শেখাবেন, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো—আপনি নিজে কীভাবে আচরণ করছেন।

শিশুর ভবিষ্যৎ গঠনে বাবা-মায়ের ভূমিকাই প্রধান। তাই ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে শিশুর মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা, সম্মানবোধ ও ভালো অভ্যাস গড়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: Breaking News | সীমান্তবর্তী জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে বিএসএফ-এর সিভিক অ্যাকশন প্রোগ্রাম

Join Our WhatsApp Group For New Update
RELATED ARTICLES

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়