Mizoram Becomes India’s First Fully Literate State: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শান্ত ও সবুজ রাজ্য মিজোরাম আজ একটি গর্বিত অধ্যায় রচনা করেছে — দেশের প্রথম সম্পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০২৫ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘উল্লাস – নব ভারত সাক্ষরতা কার্যক্রম’ (ULLAS)-এর অধীনে এই ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়। দেশের শিক্ষা-ইতিহাসে এই ঘটনা একটি মাইলফলক।
বর্তমানে মিজোরামের সাক্ষরতার হার ৯৮.২%, যা জাতীয় গড়ের অনেক উপরে। এই অর্জন শুধু সংখ্যাতাত্ত্বিক নয়, বরং এটি প্রমাণ করে কিভাবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক কার্যকরীতা এবং জনসম্পৃক্ততা একটি রাজ্যকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
📈 সাক্ষরতার যাত্রাপথ: কোথা থেকে কোথায়
মিজোরামের সাক্ষরতার ইতিহাস নতুন নয়। ২০১১ সালের জনগণনায় রাজ্যের সাক্ষরতার হার ছিল ৯১.৩৩%। এটি তখনো দেশের অন্যতম উচ্চ সাক্ষরতা হার ছিল। তবে তার পরবর্তী বছরগুলোতে রাজ্য সরকার সক্রিয়ভাবে উদ্যোগ নেয় সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিতে।
শুধুমাত্র বিদ্যালয়মুখী শিক্ষাই নয়, বরং বয়স্ক শিক্ষা, মহিলা সাক্ষরতা ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা প্রসারে নজিরবিহীন কাজ করা হয়েছে। প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক দপ্তরে সাক্ষরতা মিশনের আলাদা সেল গঠিত হয়, যেখান থেকে স্থানীয় পরিকল্পনা ও স্বেচ্ছাসেবক পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া হয়।
🧑🏫 কারা ছিলেন এই সাফল্যের নায়ক?
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে একদল নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় প্রশাসন এবং সবচেয়ে বড় কথা— সাধারণ মানুষ। মিজোরামের জনগণ নিজেরাই শিক্ষা গ্রহণকে সম্মানের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন, যা অন্য অনেক রাজ্যে অনুপস্থিত।
- স্থানীয় এনজিও ও গির্জা সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শিক্ষাকে তারা সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে।
- নারী নেতৃত্ব বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। গ্রামীণ মহিলারা রাতের স্কুলে গিয়ে সাক্ষর হয়েছেন এবং অনেকেই এখন শিক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন।
🏫 কীভাবে কাজ করল ‘উল্লাস’ কর্মসূচি?
ULLAS বা ‘Understanding Lifelong Learning for All in Society’ কর্মসূচিটি ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার চালু করে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের প্রতিটি নাগরিককে সাক্ষর করে তোলা, যার অন্তর্গত শর্ত ছিল — ৯৫% বা তার বেশি সাক্ষরতার হার অর্জন করা।
মিজোরাম ছিল সেই প্রথম রাজ্য, যারা এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ শুরু করেছিল আগেভাগেই। প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল, সীমান্তবর্তী গ্রাম, এমনকি অভিবাসী জনগোষ্ঠী — কাউকেই বাদ রাখা হয়নি। বিশেষ মোবাইল শিক্ষাদল, “ডিজিটাল সাক্ষরতা ভ্যান” এবং “ওপেন স্কুলিং মডিউল” প্রবর্তন করা হয়।
🌐 ডিজিটাল সাক্ষরতা ও প্রযুক্তির ভূমিকা
মিজোরাম সরকার তথ্য প্রযুক্তিকে সাক্ষরতা অভিযানে অঙ্গীকারবদ্ধভাবে ব্যবহার করেছে। গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা ডিজিটাল লার্নিং সেন্টারে পড়াশোনা করেছে, অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।
‘Mizo Learn’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয় যা বাংলা, ইংরেজি ও মিজো ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে ২০২৩-২৫ সালের মধ্যে ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্ব-প্রণোদিতভাবে সাক্ষর হয়েছেন।
🏆 শিক্ষায় কেরলকে ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস
একসময় দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত রাজ্য হিসেবে কেরলকে বিবেচনা করা হতো। ২০১১ ও ২০০১ সালের জনগণনায় কেরল বারবার শীর্ষে ছিল। কিন্তু ২০২৫-এর এই ঘোষণা মিজোরামকে সেই স্থান দখলের সম্মান দেয়। কেরলের বর্তমান সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৬.২%, যেখানে মিজোরাম এগিয়ে রয়েছে ৯৮.২%-এ।
এই অর্জন কেবল সংখ্যা নয়, এটি প্রতিটি মিজো নাগরিকের শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত হওয়ার প্রতীক।
💬 কী বললেন কর্মকর্তারা?
মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী লালবিয়াকজুয়ালা এক বিবৃতিতে বলেন,
“এই সাফল্য আমাদের রাজ্যের আত্মসম্মান ও ঐক্যের প্রতিফলন। আমাদের জনগণ দেখিয়ে দিয়েছেন যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব প্রতিটি ঘরে।”
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন,
“মিজোরামের এই অসাধারণ অর্জন ভারতের শিক্ষানীতির সঠিক পথনির্দেশ করে। আমরা প্রত্যাশা করি, অন্যান্য রাজ্যও এই পথ অনুসরণ করবে।”
🎓 ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: শিক্ষা গন্তব্যে রূপান্তর
রাজ্য সরকার জানিয়েছে যে এই অর্জনের পর তারা এখন মিজোরামকে উচ্চশিক্ষা ও প্রযুক্তি শিক্ষার গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিচ্ছে।
- ইন্টারন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
- প্রতিটি ব্লকে একটি করে ডিজিটাল শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
- মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা অনুদান চালু করা হবে।
🎉 জনগণের প্রতিক্রিয়া
রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে উল্লাস উদযাপন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মিছিল করেছে, শিক্ষক-অভিভাবকরা কেক কেটে উদযাপন করেছেন।
আইজলের একটি গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষিকা সেলিনা থাঞ্জাম বলেন,
“আজ আমি গর্বিত, কারণ আমার পরিশ্রমের ফল আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।”
এক আদর্শ রাজ্যের প্রতিচ্ছবি
মিজোরামের এই অর্জন শুধু একটি রাজ্যের শিক্ষা অগ্রগতির প্রতীক নয়, বরং সারাদেশের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। এটি প্রমাণ করে, যথাযথ পরিকল্পনা ও জনগণের সম্পৃক্ততা থাকলে কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়।
এখন সময় এসেছে অন্যান্য রাজ্যগুলোর মিজোরামকে অনুসরণ করে শিক্ষা ক্ষেত্রেও এক নতুন ভারত গড়ে তোলার।
[…] […]