Vantara: ২০২৪ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি, শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির পুত্র অনন্ত আম্বানির স্বপ্নপূরণ হয় – উন্মোচিত হয় “ভান্তারা”। গুজরাটের জামনগরে ৩,৫০০ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এই অভূতপূর্ব বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি শুধু ভারতের নয়, বিশ্বজুড়েই এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ৩রা মার্চ, বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ভারতের অঙ্গীকারকে আরও দৃঢ় করে।
ভান্তারা কোনো সাধারণ চিড়িয়াখানা নয়। এটি এক অত্যাধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত এবং মানবিক কেন্দ্র, যেখানে ২৫,০০০-এরও বেশি বন্যপ্রাণীর জীবন সুরক্ষিত। ৪৮টিরও বেশি প্রজাতির প্রাণীর বৃহত্তম সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ভান্তারা ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে।
ভান্তারার অনন্য বৈশিষ্ট্য (Vantara):
১. বিশ্বের বৃহত্তম বন্যপ্রাণী উদ্ধার অভিযান: ভান্তারা ২৫,০০০-এরও বেশি উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, যা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
২. এশিয়ার প্রথম অত্যাধুনিক পশু হাসপাতাল: এখানে সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই-এর মতো উন্নত রোগ নির্ণয় সুবিধা রয়েছে, যা বিশেষভাবে প্রাণীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
৩. বিশেষায়িত উদ্ধার কেন্দ্র: ভান্তারাতে ৩০০টিরও বেশি চিতাবাঘের বৃহত্তম চিতাবাঘ উদ্ধার কেন্দ্র এবং ২৫০টিরও বেশি হাতির জন্য একটি হাতি পরিচর্যা কেন্দ্র রয়েছে।
৪. বিশ্বমানের কোয়ারেন্টাইন সুবিধা: এটি বিশ্বের বৃহত্তম এবং ভারতের একমাত্র প্রাণী বন্যপ্রাণী কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের আবাসস্থল।
৫. এশিয়ার বৃহত্তম পশু চিকিৎসা ফার্মেসি: দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং যত্নের জন্য ৭৫টিরও বেশি পশু অ্যাম্বুলেন্সের সাথে সজ্জিত।
৬. বিশাল সবুজ আচ্ছাদন: ক্যাম্পাসটি ২৫ মিলিয়নেরও বেশি গাছের আবাসস্থল।
৭. আন্তর্জাতিক উদ্ধার প্রচেষ্টা: ২৫০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক প্রাণী উদ্ধার অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
৮. অত্যাধুনিক পশু চিকিৎসা অবকাঠামো: সিটি স্ক্যান, এমআরআই, আল্ট্রাসাউন্ড, কেমোথেরাপি, এক্স-রে, এন্ডোস্কোপি, লিথোট্রিপসি, লেজার থেরাপি, আকুপাংচার, রোবোটিক লেজার সার্জারি, একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক, প্লাজমা সেপারেটর এবং অ্যাবাক্সিস ভেট স্ক্যানের মতো উন্নত ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামসহ সুবিধা।
৯. বৃহৎ কর্মীবাহিনী: প্রায় ৩,৫০০ জন লোক ভান্তারায় কর্মরত, এর কার্যক্রম এবং গবেষণায় অবদান রাখছে।
১০. অনন্য নির্বীজকরণ সুবিধা: ভান্তারাতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য নিবেদিত বিশ্বের একমাত্র কেন্দ্রীয় নির্বীজকরণ সুবিধা রয়েছে।
ভান্তারা শুধু উদ্ধার ও পরিচর্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি জনকল্যাণমূলক দাতব্য ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রাণীদের নিঃস্বার্থ সেবায়ও নিয়োজিত। চিতা, সরু লোরিস, শকুন এবং গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডের মতো ভারতের স্থানীয় বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এই কেন্দ্রটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) সহ শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে সহযোগিতা করে। ভান্তারা বন্যপ্রাণী কল্যাণে নতুন বিশ্বমান স্থাপন করতে চায়, যা মানবতার শ্রেষ্ঠত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আরও পড়ুন: পোনা মাছ: তারুণ্যের উৎস এবং একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য