America: সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা
আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে একসময় ছিল মাত্র ১৩টি ব্রিটিশ উপনিবেশ। ১৮ শতকে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশদের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এই অঞ্চল। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই এই উপনিবেশগুলো একত্রিত হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে, যার মাধ্যমে জন্ম নেয় ‘ইউনাইটেড কলোনিজ় অফ আমেরিকা’।
কিন্তু ব্রিটেন সহজে ছাড়ার পাত্র ছিল না। শুরু হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ, যা চলে দীর্ঘ সাত বছর। শেষ পর্যন্ত ১৭৮৩ সালের প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা স্বীকৃতি পায়। সে সময় দেশটির আয়তন ছিল ১১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার, যা পরে বিভিন্ন চুক্তি, লড়াই এবং কৌশলগত ক্রয়ের মাধ্যমে বিশাল আকার ধারণ করে।
লুইজিয়ানা ক্রয়: এক রাতেই দ্বিগুণ আমেরিকা:
নতুন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশের পর আমেরিকা প্রথম বড় ভূখণ্ড বাড়ায় ১৮০৩ সালে, যখন ফ্রান্সের কাছ থেকে ২১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল লুইজিয়ানা অঞ্চল মাত্র ১ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারে কিনে নেয়। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ইউরোপের যুদ্ধে অর্থ সঙ্কটে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নেন।
ফ্লোরিডা অধিগ্রহণ: স্পেনের পরাজয়
স্পেনের অধীন থাকা ফ্লোরিডা ১৮১৯ সালে মাত্র ৫০ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের নেতা জন কুইন্সি অ্যাডামস কৌশলে অঞ্চলটি নিজেদের করায়ত্ত করেন।
টেক্সাসের অন্তর্ভুক্তি ও মেক্সিকো-আমেরিকা যুদ্ধ:
টেক্সাস মূলত মেক্সিকোর অংশ ছিল, তবে ১৮৩৬ সালে এটি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৮৪৫ সালে টেক্সাস যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হলে, মেক্সিকো ক্ষুব্ধ হয় এবং যুদ্ধ শুরু হয় ১৮৪৬ সালে। দুই বছর পর মার্কিন বাহিনী মেক্সিকোকে পরাজিত করে এবং গুয়াদালুপে হিডালগো চুক্তির মাধ্যমে ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাডা, অ্যারিজোনা, নিউ মেক্সিকোসহ বিশাল অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ওরেগন ও আলাস্কা: ব্রিটেন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি
১৮৪৬ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে ওরেগন অঞ্চল পায় আমেরিকা। পরে ১৮৬৭ সালে মাত্র ৭২ লক্ষ ডলারে রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কিনে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময়ে এই চুক্তিকে ‘বোকামির চুক্তি’ বলা হলেও পরবর্তীতে এটি অত্যন্ত লাভজনক প্রমাণিত হয়।
হাওয়াই ও প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকার আধিপত্য
১৮৯৮ সালে আমেরিকা হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ দখল করে, যা পরে ১৯৫৯ সালে ৫০তম রাজ্যে পরিণত হয়। একই সময়ে স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে গুয়াম, ফিলিপিন্স, পুয়ের্তো রিকো ও কিউবা দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও পরে ফিলিপিন্স ও কিউবা স্বাধীনতা লাভ করে, তবে গুয়াম ও পুয়ের্তো রিকো এখনো আমেরিকার অধীনে।
ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি: গ্রিনল্যান্ড ও কানাডা?
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার কথাও শোনা গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তার শুধুমাত্র যুদ্ধ ও চুক্তির মাধ্যমে নয়, অর্থনৈতিক শক্তির মাধ্যমেও ঘটেছে। ভবিষ্যতে তারা কোন পথে এগোবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর গভীরে লুকিয়ে থাকা দানব পর্বত: এভারেস্টের চেয়ে ১০০ গুণ বড়
[…] […]