Positive বার্তা (বাংলা)

A teamwork initiative of Enthusiastic people using Social Media Platforms

Homeব্লগএকটি ভবনের মধ্যে গোটা শহর: রহস্যময় হুইটিয়ার, আলাস্কা

একটি ভবনের মধ্যে গোটা শহর: রহস্যময় হুইটিয়ার, আলাস্কা

A City Within a Building: বিশ্বের এমন অনেক স্থান রয়েছে যা তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। তবে এমন একটি শহর কল্পনা করুন, যেখানে পুরো জনসংখ্যা মাত্র একটি ভবনের মধ্যে বসবাস করে! হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—এই বিস্ময়কর শহরের নাম হুইটিয়ার (Whittier), যা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত।

হুইটিয়ার শহরের রহস্যময় ইতিহাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯৪৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী আলাস্কার প্রত্যন্ত অঞ্চলে হুইটিয়ার শহর প্রতিষ্ঠা করে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি নিরাপদ সামরিক বন্দর এবং রেলপথ তৈরি করা, যা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যুদ্ধ শেষে সামরিক ঘাঁটি ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং সাধারণ নাগরিকদের জন্য এখানে বসবাসের সুযোগ তৈরি হয়। ১৯৬৯ সালে এই শহরটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়, কিন্তু কঠোর আবহাওয়ার কারণে শহরের জনসংখ্যা খুব বেশি বৃদ্ধি পায়নি।

একটি ভবনের মধ্যে গোটা শহরের জীবন (A City)

হুইটিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষ মাত্র একটি ভবনে থাকে, যার নাম বেগিচ টাওয়ার (Begich Towers)। ১৪-তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি শুধু বসবাসের জন্য নয়, বরং এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কমিউনিটি। এই ভবনের মধ্যেই রয়েছে স্কুল, পুলিশ স্টেশন, ডাকঘর, দোকানপাট, চার্চ, হাসপাতাল, এবং বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা। শহরের প্রায় ২৭০ জন বাসিন্দার বেশিরভাগই এখানে থাকেন।

কেন একটি ভবনেই সবাই থাকে?

হুইটিয়ারের অনন্য জীবনযাত্রার পেছনে কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে।

১. চরম প্রতিকূল আবহাওয়া

শহরটিতে বছরের প্রায় ২০০ দিন তুষারপাত হয় এবং প্রচণ্ড বাতাস প্রবাহিত হয়, যা ঘণ্টায় ৬০ মাইলেরও বেশি গতিবেগে প্রবাহিত হতে পারে। এই প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে একাধিক ভবনে বসবাস করা বেশ কষ্টকর এবং বিপজ্জনক। তাই সবাই একসঙ্গে একটিমাত্র ভবনে থাকা বেশি নিরাপদ ও সুবিধাজনক।

২. ভবন নির্মাণের কঠিন বাস্তবতা

আলাস্কার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন ভবন তৈরি করা খুব ব্যয়বহুল এবং জটিল। নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন করাও কঠিন, কারণ হুইটিয়ার মূলত বাইরের বিশ্বের সঙ্গে একটি টানেলের মাধ্যমে সংযুক্ত। তাই একটি বড় ভবনেই সবকিছু সংযুক্ত করে শহরের প্রয়োজনীয়তা মেটানো হয়েছে।

৩. সহজ এবং সুবিধাজনক জীবনধারা

একটি ভবনের মধ্যে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থাকায় যাতায়াতের ঝামেলা নেই। শিশুদের স্কুলে যাওয়ার জন্য ভবনের বাইরে যেতে হয় না, কর্মরত ব্যক্তিরাও ভবনের মধ্যেই তাদের অফিস বা কাজের জায়গায় পৌঁছে যেতে পারেন।

বেগিচ টাওয়ারের ভেতরে কী কী আছে?

  • বাসস্থান – ভবনের বেশিরভাগ ফ্ল্যাটেই শহরের অধিবাসীরা থাকেন।
  • স্কুল – ভবনের একটি অংশেই স্কুল রয়েছে, যেখানে শিশুরা পড়াশোনা করে।
  • পুলিশ স্টেশন – আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভবনেই একটি পুলিশ স্টেশন রয়েছে।
  • ডাকঘর ও দোকান – দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সুবিধা রয়েছে।
  • চার্চ ও কমিউনিটি হল – ধর্মীয় এবং সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ এলাকা রয়েছে।
  • টানেল সংযোগ – শহরটি বাইরের বিশ্বের সঙ্গে অ্যান্টন অ্যান্ডারসন মেমোরিয়াল টানেল নামক দীর্ঘতম রেল ও সড়ক টানেলের মাধ্যমে সংযুক্ত।

A City: দৈনন্দিন জীবন কেমন?

হুইটিয়ারের বাসিন্দারা খুবই ঘনিষ্ঠ এবং সবাই একে অপরকে ভালোভাবে চেনে। কারণ সবাই একই ভবনে থাকে এবং একই কমিউনিটির অংশ।

🔹 শীতকাল: এই সময় শহর প্রায় সম্পূর্ণভাবে বরফের নিচে ঢাকা থাকে। বাইরে বের হওয়ার সুযোগ কম, তাই সবাই ভবনের মধ্যেই বেশিরভাগ সময় কাটায়।

🔹 গ্রীষ্মকাল: এই সময় পর্যটকরা আসতে শুরু করে, ফলে শহরে কিছুটা ব্যস্ততা দেখা যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং আলাস্কার প্রকৃতি দেখতে বহু পর্যটক এখানে আসেন।

সংযোগ ব্যবস্থা

হুইটিয়ার শহরের সঙ্গে বাইরের বিশ্বের সংযোগ খুবই সীমিত।

  • টানেল: এটি হচ্ছে শহরের প্রধান সংযোগপথ। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এটি খোলা হয় এবং এর মাধ্যমে ট্রেন ও গাড়ি উভয়ই চলাচল করতে পারে।
  • জলপথ: সমুদ্রবন্দর থাকায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ মাধ্যম। পর্যটকদের জন্য কিছু নৌযান পরিষেবা রয়েছে।
  • রেলপথ: এটি আলাস্কার অন্যান্য শহরের সঙ্গে সংযুক্ত। তবে এই রেলপথের ব্যবহার সীমিত।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান

হুইটিয়ার তার অনন্য জীবনযাত্রা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এখানে ভ্রমণকারীদের আনাগোনা বেড়ে যায়।

  • ফজর্ড ও হিমবাহ দর্শন: আশেপাশের বরফে ঢাকা পাহাড় এবং হিমবাহ পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
  • কায়াকিং ও ফিশিং: আলাস্কার নদী ও সাগরে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা অনন্য।
  • হাইকিং: কিছু নির্দিষ্ট মৌসুমে পর্যটকরা হাইকিং করতে পারেন।

বিশ্বের অন্যতম অদ্ভুত শহর (A City)

হুইটিয়ার শুধু তার প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্যই নয়, বরং তার ব্যতিক্রমী জীবনধারা ও সমাজব্যবস্থার জন্যও আলোচিত। এটি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অভিযোজনের এক অনন্য উদাহরণ।

একটি ভবনের মধ্যে পুরো শহরের জীবনযাত্রা সহজ নয়, তবে হুইটিয়ারের বাসিন্দারা নিজেদের জীবনকে যথাসম্ভব সুন্দরভাবে পরিচালনা করে।

বিশ্বে এমন খুব কম শহর রয়েছে যেখানে একটি ভবনের মধ্যেই পুরো শহর পরিচালিত হয়। হুইটিয়ার শহরটি মানুষের স্থিতিশীলতা, অভিযোজনশীলতা এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এক দুর্দান্ত উদাহরণ। যদি আপনি কখনো আলাস্কা ভ্রমণ করেন, তাহলে এই রহস্যময় শহরটি আপনার দেখার তালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত!

আরও পড়ুন: Breaking News | আগরতলা গাউছিয়া সমিতির উদ্যোগে সৌভ্রাতৃত্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত

Join Our WhatsApp Group For New Update
RELATED ARTICLES

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়