Yellowstone Super volcano: আমেরিকার হৃদয়ে, সবুজ বন-জঙ্গল ও উত্তপ্ত গেইসার ঘেরা ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের নিচে এক বিশাল প্রাকৃতিক বিস্ফোরণের সম্ভাবনা ঘুমিয়ে আছে—যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ বিপর্যয়ের জন্ম দিতে পারে। এই সুপারভলকানোর নাম ইয়েলোস্টোন ক্যালডেরা, যা বৈজ্ঞানিক মহলে একাধারে গবেষণার কৌতূহল এবং আতঙ্কের কারণ।
🔬 সুপারভলকানো কী এবং ইয়েলোস্টোন কেন বিশেষ?
সাধারণ আগ্নেয়গিরি যেমন পাহাড় থেকে লাভা উদ্গিরণ করে, সুপারভলকানো তার চেয়ে বহু গুণ বেশি শক্তি ধারণ করে। ইয়েলোস্টোন ক্যালডেরা আসলে একটি বৃহৎ আগ্নেয় বিস্ফোরণের পরে সৃষ্টি হওয়া অবতল এলাকা। এটি প্রায় ৪৫ মাইল দৈর্ঘ্য এবং ৩০ মাইল প্রস্থ জুড়ে বিস্তৃত। এটি তৈরি হয়েছে ভূগর্ভস্থ এক বিশাল ম্যাগমা চেম্বারের উপর, যা পৃথিবীর ভূত্বকে এক অতি উত্তপ্ত পকেটের মতো।
ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ইয়েলোস্টোন তিনবার ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে—প্রায় ২১ লক্ষ, ১৩ লক্ষ, এবং সর্বশেষ ৬৪০,০০০ বছর আগে। প্রতিবারই এই বিস্ফোরণ পৃথিবীর পরিবেশে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন এনেছিল।
🌋 বিস্ফোরণ ঘটলে কী হতে পারে?
যদি ইয়েলোস্টোন সুপারভলকানো পুনরায় জেগে ওঠে, তাহলে তা হবে এক কথায় প্রলয়ঙ্করী। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, একটি পূর্ণমাত্রার বিস্ফোরণ ঘটলে এর ধ্বংসক্ষমতা হবে প্রায় ১,০০০টি হিরোশিমা পারমাণবিক বোমার সমান। এটি প্রায় ২,৫০০ কিউবিক কিলোমিটার ছাই, গ্যাস ও লাভা নির্গত করতে পারে।
▪️ যুক্তরাষ্ট্রের উপর প্রভাব:
- ওয়াইমিং, মন্টানা, আইডাহো ও আশেপাশের রাজ্য সম্পূর্ণ ছাইয়ে ঢেকে যাবে।
- কয়েক হাজার কিলোমিটার এলাকায় জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
- ছাই পড়ে সূর্যের আলো মাটি পর্যন্ত পৌঁছাবে না, ফলে কৃষি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- বিদ্যুৎ, জল ও খাদ্য সরবরাহ পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা।
▪️ বৈশ্বিক প্রভাব:
- ইয়েলোস্টোনের ছাই ও গ্যাস বায়ুমণ্ডলের উচ্চস্তরে পৌঁছে সূর্য রশ্মি প্রতিফলিত করবে, তৈরি হবে এক প্রাকৃতিক “ভলকানিক শীত”।
- বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২–৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।
- বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে, কারণ ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে।
- বায়ু দূষণ, বিমান চলাচলে বিপর্যয়, এবং শ্বাসজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে।
📉 বর্তমানে ঝুঁকি কতটা বাস্তব?
ভয়াবহ এই চিত্র শুনে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক, তবে বাস্তবতা অনেকটাই আশাব্যঞ্জক। NASA, US Geological Survey (USGS) এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলোর মতে, ইয়েলোস্টোন সুপারভলকানোর বার্ষিক বিস্ফোরণের সম্ভাবনা মাত্র ০.০০০১৪%, যা এক কথায় অত্যন্ত ক্ষীণ।
বর্তমানে ইয়েলোস্টোন এলাকায় কিছু হালকা ভূমিকম্প, গেইসারের অস্বাভাবিক কার্যক্রম ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির মতো ঘটনা ঘটে, কিন্তু এইসবই স্বাভাবিক ভূ-তাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপের অংশ। বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক সেন্সর ও উপগ্রহ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এই অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করছেন।
🧪 NASA-এর পরিকল্পনা ও বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা:
NASA ২০১৭ সালে একটি বৈপ্লবিক প্রস্তাব দিয়েছিল, যাতে তারা ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা চেম্বারকে ঠান্ডা করে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে। পরিকল্পনাটি ছিল ভূপৃষ্ঠে জল প্রবেশ করিয়ে ভূগর্ভস্থ উত্তাপ শোষণ করার একটি কৌশল। যদিও এটি ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ, তবু এটি প্রমাণ করে যে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের বিপদ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন।
✅ উপসংহার: আসলেই কি আশঙ্কার কিছু আছে?
ইয়েলোস্টোন সুপারভলকানো নিঃসন্দেহে একটি ঘুমন্ত দৈত্য। এটি যদি জেগে ওঠে, তবে আমেরিকা তো বটেই, গোটা পৃথিবীও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবুও বর্তমান বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও ডেটা বলছে, এই ধরনের বিস্ফোরণ নিকট ভবিষ্যতে ঘটার কোনও লক্ষণ নেই।
বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো প্রস্তুতি ও পূর্বাভাস। আমাদের উচিত আতঙ্ক না ছড়িয়ে তথ্যনির্ভর সচেতনতা তৈরি করা। ইয়েলোস্টোন একটি প্রকৃতির মহাশক্তি, তবে সেটি এখনো নিরাপদেই ঘুমিয়ে আছে—এবং বিজ্ঞানীরা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন যেন সেই ঘুম আর কখনো না ভাঙে।
আরও পড়ুন: Health Awareness | শান্তিপাড়ায় চক্ষু শিবিরে স্বাস্থ্যসচেতনতার বার্তা
[…] আরও পড়ুন: ইয়েলোস্টোন সুপারভলকানো: ঘুমন্ত দৈত্… […]