Tuhin’s Green Embrace: “আমাদের চারপাশের প্রকৃতি, গাছপালা, নদী-নালা — এগুলো যেন জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। আর এই প্রতিচ্ছবিকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে যখন আমরা দেখি ছোট্ট শিশুরা প্রকৃতির প্রতি তাদের নির্মল ভালোবাসা উজাড় করে দেয়। সুকান্ত বণিক চৌধুরীর “পজিটিভ বার্তা”-য় প্রকাশিত পাঁচ বছরের তুহিনের গল্পটি এমনই এক মন ভালো করা দৃষ্টান্ত। এই ছোট্ট তুহিন তার সবুজ ভালোবাসার মাধ্যমে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীটাকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য বড় বড় কিছুর প্রয়োজন হয় না, কেবল একটু ভালোবাসা আর যত্নের দরকার।
তুহিন, একটি ছোট্ট গ্রামের ছেলে, যার পৃথিবী জুড়ে আছে খোলা মাঠ আর নীল আকাশ। এই মুক্ত পরিবেশে সে শুধু দৌড়ঝাঁপ বা পড়াশোনাতেই মগ্ন থাকে না, তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো গাছ লাগানো। তার বাড়ির পেছনে আছে তার নিজস্ব ছোট্ট এক বাগান, যেখানে সে নিজ হাতে লাগিয়েছে আম, নিম, কৃষ্ণচূড়া, বেল আর টগরের মতো নানা গাছ। এই গাছগুলো কেবলই গাছ নয়, তুহিনের কাছে তারা যেন একেকজন জীবন্ত বন্ধু। তাদের নামও দিয়েছে সে – “মিঠু”, “গুড্ডু”, “চাঁদু”। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে সে সোজা চলে যায় তার এই সবুজ বন্ধুদের কাছে। পরম মমতায় তাদের জল দেয়, মাটি পরীক্ষা করে দেখে কোথাও কোনো পোকা হয়েছে কিনা।
একদিন তুহিনের মা যখন তাকে প্রশ্ন করেন, “তুহিন, তুমি গাছকে এত ভালোবাসো কেন রে?”, ছোট্ট তুহিনের সহজ উত্তরটি আমাদের সবার মন ছুঁয়ে যায়। সে মুচকি হেসে বলে, “ওরা আমার বন্ধু মা, ওরা বড় হলে ছায়া দেবে, ফল দেবে। গরমে ওরা বাতাস দেয়। ওদের না ভালোবাসলে কে ভালোবাসবে?” এই সরল অথচ গভীর উক্তিটি প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্কের এক নতুন সংজ্ঞা দেয়। তুহিন বোঝে, গাছ শুধু প্রাকৃতিক উপাদান নয়, তারা আমাদের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য এবং নিঃস্বার্থ বন্ধু।
তুহিনের এই ছোট্ট ভালোবাসা ধীরে ধীরে তার আশেপাশের পরিবেশেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তার দেখাদেখি পাড়ার অন্য ছেলেমেয়েরাও গাছ লাগানোর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এমনকি তাদের স্কুলেও শুরু হয় একটি ছোট্ট বৃক্ষরোপণ অভিযান, যার নাম দেওয়া হয় “তুহিনের বাগান”। তুহিনের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, একটি ছোট্ট শিশুর নিষ্পাপ আকাঙ্ক্ষাও সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
তুহিনের গল্প আমাদের শেখায়, ভালোবাসা কেবল মানুষে সীমাবদ্ধ নয়, প্রকৃতির প্রতিও হতে পারে সেই একই গভীর ভালোবাসা। যদি প্রতিটি শিশু তুহিনের মতো করে গাছকে ভালোবাসতে শেখে, তাদের যত্ন নেয়, তাহলে হয়তো একদিন আমাদের এই পৃথিবী সত্যিই সবুজে ভরে উঠবে। পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন—এসব বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়তো লুকিয়ে আছে এই ছোট্ট সবুজ ভালোবাসার মধ্যে।
সত্যিই, একটি ছোট হাত বড় পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। তুহিন তার এক উজ্জ্বল প্রমাণ। তার গল্প আমাদের অনুপ্রাণিত করে প্রকৃতির সাথে আমাদের বন্ধনকে আরও নিবিড় করতে, আর একটি সবুজ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে।
আরও পড়ুন: আসানসোল ফিরছে তার ‘আসান’ পরিচয়ে: বিবি কলেজের প্রশংসনীয় উদ্যোগ