The Universe Concealed:পাই (π), গণিতের এক রহস্যময় ধ্রুবক—যার মান ৩.১৪-এর আড়ালে লুকিয়ে আছে এক অনন্ত ধারা। এই আপাত-সরল গ্রিক অক্ষরটির মান নির্ণয়ের সূত্রগুলির স্রষ্টা হলেন কিংবদন্তী ভারতীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন। আজ থেকে এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে, ১৯১৪ সালে তিনি ‘পাই’-এর মান গণনার জন্য ১৭টি অভূতপূর্ব গাণিতিক সূত্র উন্মোচন করেছিলেন।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, রামানুজনের সেই সূত্রগুলি কেবল পাটিগণিতের ইতিহাস নয়, বরং তা আধুনিক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা (Theoretical Physics)-এর জটিলতম রহস্যগুলির সমাধান দিতে সক্ষম।
বিস্ময়কর আবিষ্কারের নেপথ্যে
বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের (IISc) ‘সেন্টার ফর হাই এনার্জি ফিজিক্স’-এর গবেষকরা এই চমকপ্রদ সংযোগটি খুঁজে পেয়েছেন। রামানুজনের সূত্রকে ভিত্তি করে তৈরি চ্যাডনোভস্কি অ্যালগরিদম (Chudnovsky Algorithm) ব্যবহার করেই বিজ্ঞানীরা ‘পাই’-এর মান ২০০ ট্রিলিয়ন দশমিক স্থান পর্যন্ত গণনা করতে সক্ষম হয়েছেন।
কিন্তু গবেষক দলের লক্ষ্য ছিল আরও গভীর। অন্যতম প্রধান গবেষক অনিন্দ্য সিনহা-এর তত্ত্বাবধানে ফৈজান ভাট ও তাঁর সহকারীরা একটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন:
“আমরা দেখতে চেয়েছিলাম সূত্রগুলির সূচনা বিন্দুটি পদার্থবিজ্ঞানের কাঠামোর সঙ্গে খাপ খায় কিনা। অর্থাৎ এমন কোনও ভৌত জগৎ কি রয়েছে, যেখানে রামানুজনের গণিত নিজে নিজেই আবির্ভূত হয়?”
এই জিজ্ঞাসার অনুসন্ধানেই ঘটে যায় ‘ম্যাজিক’।
পদার্থবিদ্যার জটিলতম সমস্যার সমাধান
দেখা যায়, রামানুজনের শতবর্ষী সূত্রগুলি পদার্থবিদ্যার বেশ কিছু কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হচ্ছে, যা তিনি নিজে কল্পনাও করেননি। এর মধ্যে রয়েছে:
মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে কণার গতি: পদার্থের চলাচলের জটিল গতিবিধি।
তরলের অশান্ত প্রবাহ: তরল পদার্থে টর্বুলেন্স (Turbulence) বা বিশৃঙ্খল প্রবাহের সূচনাবিন্দু।
কৃষ্ণগহ্বর (Black Hole) বর্ণনা: কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কিত বিশেষ এবং গভীরতর ব্যাখ্যা।
যে সূত্রগুলি এক শতাব্দী আগে শুধুমাত্র ‘পাই’-এর মান নির্ণয়ের জন্য আবিষ্কৃত হয়েছিল, তা আজ মহাবিশ্বের অন্যতম জটিল ভৌত ঘটনাগুলি ব্যাখ্যা করছে—যা গবেষকদেরকে রীতিমতো অভিভূত করেছে।
কালের সীমানা পেরিয়ে এক প্রতিভা
শ্রীনিবাস রামানুজন মাত্র ৩২ বছর বয়সে, ১৯২০ সালে প্রয়াত হন। তাঁর জীবনকাল সংক্ষিপ্ত হলেও, গণিতে তাঁর অবদান আজও ফুরোয়নি। মৃত্যুর পর এক শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও, তাঁর সূত্রগুলি আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
অনিন্দ্য সিনহা ও তাঁর দলের এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, বিশুদ্ধ গণিতের গভীরতম ক্ষেত্রগুলি প্রায়শই প্রকৃতির গভীরতম রহস্যগুলির চাবিকাঠি ধারণ করে। ‘পাই’ (π) থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি, কৃষ্ণগহ্বরের গঠন পর্যন্ত—রামানুজনের গাণিতিক জাদু আজও অক্ষুণ্ণ এবং প্রাসঙ্গিক।
আপনার কি মনে হয়, এই সূত্রগুলি ভবিষ্যতে স্ট্রিং থিওরি বা কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির মতো আরও জটিল তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার সমস্যা সমাধানে কাজে আসতে পারে?
আরও পড়ুন: জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্টে নতুন দিগন্ত! RBI-এর নিয়মে গ্রাহকদের জন্য ‘ডাবল’ সুবিধা





