Diabetic: রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে ডায়াবেটিস বলা হয়। ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ যা আমাদের শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন বা ব্যবহারে সমস্যার সৃষ্টি করে। ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অনেকগুলি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- টাইপ–১ ডায়াবেটিস:এই ধরনের ডায়াবেটিসে আমাদের শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না।
- টাইপ–২ ডায়াবেটিস:এই ধরনের ডায়াবেটিসে আমাদের শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, কিন্তু তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না।
- গর্ভাবস্থাজনিত ডায়াবেটিস:এই ধরনের ডায়াবেটিস গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে দেখা দেয়।
- অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা:কিছু অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন Cushing’s syndrome, Addison’s disease, এবং polycystic ovary syndrome, রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে (Diabetic):-
- পলিডিপসিয়া (অতিরিক্ত প্রস্রাব):শরীর অতিরিক্ত শর্করা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।
- পলিউরিয়া (অতিরিক্ত প্রস্রাব):শরীর অতিরিক্ত শর্করা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।
- পলিফাজি (অতিরিক্ত ক্ষুধা):শরীর অতিরিক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্তির উৎস হিসেবে গ্লাইকোজেন ভাঙতে শুরু করে, যা ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
- ওজন হ্রাস:শরীর অতিরিক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্লাইকোজেন ভাঙতে শুরু করে, যা ওজন হ্রাসের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
- চোখের সমস্যা:রক্তের শর্করার মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে বেড়ে থাকলে চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন রেটিনোপ্যাথি, যা দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করতে পারে।
- কিডনির সমস্যা:রক্তের শর্করার মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে বেড়ে থাকলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন নেফ্রোপ্যাথি, যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
- হৃদরোগ:রক্তের শর্করার মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে বেড়ে থাকলে হৃদরোগ, যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক, হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- স্নায়বিক সমস্যা:রক্তের শর্করার মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে বেড়ে থাকলে স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন নিউরোপ্যাথি, যা ব্যথা, ঝাঁকুনি, এবং অবশতা সৃষ্টি করতে পারে।
(Diabetic) -রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অনেকগুলি ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। তবে, কিছু ঘরোয়া উপায়ও রয়েছে যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। শর্করা নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি হল এমন কার্যকলাপ এবং পরিবর্তন যা একজন ব্যক্তি তার বাড়িতে করতে পারে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে:
- নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিনিট মাঝারি-তীব্রতার ব্যায়াম বা 75 মিনিট উচ্চ-তীব্রতার ব্যায়াম করা লক্ষ্য করা উচিত।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পূর্ণ শস্য, ফল, শাকসবজি এবং চর্বিহীন প্রোটিন খাওয়ার উপর ফোকাস করা উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় এবং অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়ানো উচিত।
- অতিরিক্ত ওজন কমানো: অতিরিক্ত ওজন থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে। অতিরিক্ত ওজন কমানো রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে 7-8 ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
- নিয়মিত চিনি পরীক্ষা করা: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এখানে কিছু নির্দিষ্ট খাবার এবং পানীয় রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে:
- পূর্ণ শস্য: পূর্ণ শস্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য ধীর গতিতে হজম হয়। পূর্ণ শস্যের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে ওটমিল, ব্রাউনি রুটি, এবং বাজরা।
- ফল: ফল ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। ফল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য ধীর গতিতে হজম হয়। ফলের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে আপেল, কমলা, এবং বেরি।
- শাকসবজি: শাকসবজি ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। শাকসবজি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য ধীর গতিতে হজম হয়। শাকসবজির উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে ব্রোকলি, পালং শাক, এবং গাজর।
- চর্বিহীন প্রোটিন: চর্বিহীন প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। চর্বিহীন প্রোটিনের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে মুরগির মাংস, মাছ, এবং বাদাম।
শর্করা নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি কার্যকর হতে পারে, তবে তারা সবসময় পর্যাপ্ত নয়। কিছু ক্ষেত্রে, ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
এখানে কিছু অতিরিক্ত টিপস রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে (Diabetic):
- নিয়মিত চিনি পরীক্ষা করুন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে আপনার ফলাফলগুলি শেয়ার করুন।
- আপনার ডাক্তারের সাথে একটি খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করুন যা আপনার ব্যক্তিগত চাহিদাগুলি পূরণ করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং আপনার লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে চলুন।
- মানসিক চাপ পরিচালনা করুন।
শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকার মাধ্যমে, আপনি দীর্ঘস্থায়ী জটিলতাগুলির ঝুঁকি কমাতে পারেন, যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস।
আরও পড়ুন: Seafood | সামুদ্রিক খাবারের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ: –