Snake Island: বিশ্বে এমন অনেক রহস্যময় স্থান রয়েছে যেখানে মানুষ পা রাখার সাহস পায় না। কিন্তু সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে এক অদ্ভুত ও ভয়ংকর দ্বীপ — ব্রাজিলের “স্নেক আইল্যান্ড” (Snake Island) বা “ইলহা দা কেমাডা গ্র্যান্ডে” (Ilha da Queimada Grande)। এটি এমন এক দ্বীপ যেখানে মানুষের নয়, সাপেরই রাজত্ব! এই দ্বীপের নাম শুনলেই শিউরে ওঠে বিজ্ঞানীরাও। কারণ এখানে প্রতি বর্গমিটারে গড়ে ৫টি করে বিষধর সাপ বসবাস করে!
কোথায় অবস্থিত এই স্নেক আইল্যান্ড?
এই রহস্যময় দ্বীপটি ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে, আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। আয়তনে খুব ছোট — মাত্র ৪৩ হেক্টর বা ০.৪৩ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু ক্ষুদ্র এই ভূমিখণ্ডে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর জগত, যেখানে প্রতিটি পাথরের ফাঁক, প্রতিটি গাছের নিচে লুকিয়ে থাকে মৃত্যুর ছায়া।
সাপের রাজত্ব — পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর প্রজাতি
এই দ্বীপের সবচেয়ে বিখ্যাত ও ভয়ংকর বাসিন্দা হলো Golden Lancehead Viper বা Bothrops insularis। এটি পৃথিবীর অন্যতম সবচেয়ে বিষধর সাপ।
এই সাপের বিষ এতটাই শক্তিশালী যে, তা মানুষের শরীরের টিস্যু মুহূর্তেই গলিয়ে ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি কামড়ই মানুষের মৃত্যু ঘটাতে যথেষ্ট। এই প্রজাতিটি কেবলমাত্র এই দ্বীপেই পাওয়া যায়, পৃথিবীর অন্য কোথাও নয়। অর্থাৎ, এটি এক “এন্ডেমিক স্পিশিজ” (Endemic Species) — একেবারেই বিরল এবং বিপন্ন।
কেন মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ?
ব্রাজিল সরকার বহু বছর আগে থেকেই এই দ্বীপে মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।
কারণ খুবই সহজ — এখানে প্রবেশ মানেই মৃত্যুর ঝুঁকি।
কেবলমাত্র কিছু গবেষক বা বিজ্ঞানী বিশেষ অনুমতি নিয়ে অল্প সময়ের জন্য সেখানে যেতে পারেন, সেটিও কঠোর নিরাপত্তা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে। অতীতে বহুবার সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে — এমনকি কিছু জেলে ভুলবশত দ্বীপের কাছে চলে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তাই সাধারণ মানুষের প্রবেশ সেখানে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
কেন এত সাপ জন্ম নিল এই দ্বীপে?
এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে হাজার বছর আগের ভূগোলের পরিবর্তনে।
প্রাচীন কালে এই দ্বীপটি মূল ভূখণ্ডেরই অংশ ছিল। কিন্তু যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, তখন দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে সেখানে থাকা সাপেরা বাইরের জগতে যেতে পারেনি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের অভাবে ও প্রাকৃতিক বিবর্তনের কারণে তারা হয়ে ওঠে অত্যন্ত বিষধর। যাতে তারা দ্রুত শিকার হত্যা করতে পারে এবং টিকে থাকতে পারে।
এভাবেই এক দ্বীপজুড়ে গড়ে ওঠে বিষাক্ত সাপের সাম্রাজ্য — এক প্রকৃতির ভয়ংকর উদাহরণ।
প্রকৃতির এক অনন্য “নিষিদ্ধ রাজ্য”
এই দ্বীপের পরিবেশ এতটাই কঠিন ও বিষাক্ত যে সেখানে কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণী বা মানুষ টিকে থাকতে পারে না। পাখিরা মাঝে মাঝে দ্বীপে আসে, আর সেই পাখিই সাপেদের প্রধান খাদ্য।
অর্থাৎ এখানে সাপই রাজা, সাপই প্রজা, সাপই শিকারী।
প্রকৃতি যেন নিজেই তৈরি করেছে এই দ্বীপকে এক “প্রাকৃতিক দুর্গ” হিসেবে, যেখানে তার সৈন্যরূপে নিযুক্ত রয়েছে বিষাক্ত সাপেরা।
বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব
যদিও এটি এক ভয়ংকর স্থান, তবুও বিজ্ঞানীদের কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্র। কারণ এখানে পাওয়া Golden Lancehead Viper-এর বিষে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা ভবিষ্যতে হৃদরোগ, রক্তজমাট, এমনকি ক্যান্সারের ওষুধ তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।
তাই কঠোর নিরাপত্তা বজায় রেখে কিছু বিশেষ গবেষণা দল বছরে কয়েকবার সেখানে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।
ভয়ংকর বাস্তবতা ও কিংবদন্তি
স্নেক আইল্যান্ড নিয়ে নানা ভয়ংকর গল্পও প্রচলিত আছে।
একটি গল্প অনুসারে, একসময় এক বাতিঘর রক্ষক ও তাঁর পরিবার সেখানে বাস করতেন। এক রাতে সাপের আক্রমণে তারা সবাই মারা যান, তারপর থেকে সেই বাতিঘর চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
যদিও এই গল্পের সত্যতা প্রমাণিত নয়, তবুও এটি দ্বীপের ভয়াবহ ভাবমূর্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সাপের স্বর্গ, মানুষের জন্য নরক
আজও ইলহা দা কেমাডা গ্র্যান্ডে এক রহস্যে ঘেরা। সেখানকার প্রতিটি ইঞ্চি ভূমি মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতি যেন এখানে তার “বিষাক্ত সৈন্যদের” দিয়ে পাহারা দিচ্ছে নিজের সৃষ্টি।
এমন এক দ্বীপ যেখানে মানুষ টিকতে পারে না, যেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাসের আড়ালেও মৃত্যুর সম্ভাবনা — সেখানে এখন রাজত্ব করছে কেবল সাপেরা।
সংক্ষেপে বললে —
“স্নেক আইল্যান্ড” হলো পৃথিবীর একমাত্র দ্বীপ যেখানে মানুষ নয়, সাপই একমাত্র শাসক।
এটি প্রকৃতির এক ভয়ংকর কিন্তু আশ্চর্য সৃষ্টি — এক “নিষিদ্ধ রাজ্য”, যেখানে মানুষ নয়, প্রকৃতি নিজেই পাহারা দেয় তার বিষাক্ত সৈন্যদের দিয়ে।
সারসংক্ষেপঃ
- অবস্থান: ব্রাজিলের উপকূল থেকে ৩৫ কিমি দূরে, আটলান্টিক মহাসাগরে
- আয়তন: ৪৩ হেক্টর (০.৪৩ বর্গকিমি)
- বাসিন্দা: প্রায় প্রতি বর্গমিটারে ৫টি করে সাপ
- প্রধান প্রজাতি: Golden Lancehead Viper
- মানুষের প্রবেশ: সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
- কারণ: প্রাণঘাতী বিষ এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি
- বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব: বিরল প্রজাতির বিষ থেকে সম্ভাব্য ওষুধ উদ্ভাবনের সুযোগ
আরও পড়ুন: ১৯,৪০০ ফুট উচ্চতায় বিশ্বের সর্বোচ্চ সড়ক নির্মাণ! নিজেদেরই রেকর্ড ভাঙল BRO





