Positive বার্তা (বাংলা)

A teamwork initiative of Enthusiastic people using Social Media Platforms

Homeস্বাস্থ্যশিশুদের মানসিক বিকাশে কার্টুন: আনন্দের সঙ্গেই সতর্কতার বার্তা

শিশুদের মানসিক বিকাশে কার্টুন: আনন্দের সঙ্গেই সতর্কতার বার্তা

Cartoons and Children’s Mental Health: আজকের দিনে কার্টুন শিশুদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। টেলিভিশন, মোবাইল কিংবা ইউটিউব—প্রায় সব জায়গাতেই ছোটরা তাদের প্রিয় কার্টুন চরিত্রদের খুঁজে পায়। একদিকে এটি বিনোদন দেয়, আবার অন্যদিকে শিশুমনে শিক্ষার নতুন দুয়ারও খুলে দেয়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—অতিরিক্ত কার্টুন দেখা কি শিশুদের মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে? চিকিৎসক এবং মনোবিদদের মতে, এর উত্তর হলো—হ্যাঁ। তাই অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি।

কার্টুন: শুধু বিনোদন নয়, শিক্ষারও হাতিয়ার

কার্টুনকে সাধারণত বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, সঠিক ধরনের কার্টুন শিশুদের শেখার ক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়াতে পারে।

  • ভাষা শেখা সহজ হয়: শিশুদের কথোপকথনের দক্ষতা বাড়াতে কার্টুন বড় ভূমিকা রাখতে পারে। গল্পের সংলাপের মাধ্যমে তারা নতুন নতুন শব্দ শিখে নেয়।
  • রং ও আকারের ধারণা: রঙিন অ্যানিমেশন এবং চিত্রভিত্তিক গল্প শিশুদের রঙ, আকার ও নকশা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।
  • সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: অনেক কার্টুনেই বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেখানো হয়। শিশুরা তা দেখে সমস্যা মোকাবিলা করার কৌশল আয়ত্ত করতে শেখে।
  • কল্পনাশক্তির বিকাশ: কার্টুনের মাধ্যমে শিশুরা গল্পের জগতে প্রবেশ করে। এতে তাদের কল্পনাশক্তি আরও তীক্ষ্ণ হয়, যা পরবর্তীতে সৃজনশীল কাজে সহায়ক হতে পারে।

কোথায় শুরু হয় সমস্যা?

যদিও কার্টুন অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবু অতিরিক্ত সময় ধরে দেখলে তা মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

১. একাগ্রতার ঘাটতি: দ্রুতগতির কার্টুন যদি টানা ৯ মিনিটের বেশি দেখা হয়, তবে শিশুদের মনোযোগ কমে যায়। এতে পড়াশোনা বা খেলাধুলায় তারা মনোসংযোগ হারাতে পারে।
২. ভাষা ও সামাজিক দক্ষতায় দেরি: বিশেষ করে ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ক্ষতিকর। এতে তাদের কথা বলা, স্মৃতি তৈরি করা বা সামাজিক আদানপ্রদানের নিয়ম শেখা দেরি হয়ে যায়।
৩. চরিত্র অনুকরণের প্রবণতা: শিশুরা প্রিয় চরিত্রদের অনুকরণ করতে শুরু করে। এতে তাদের আচরণ, কথা বলার ধরণ বা এমনকি পোশাকের প্রতি আগ্রহেও পরিবর্তন আসে। কখনও কখনও তারা বাস্তব এবং কাল্পনিক জগতের পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হয়।
৪. মানসিক অস্থিরতা: দীর্ঘ সময় কার্টুন দেখার ফলে শিশুরা খেলাধুলা বা সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে যায়। এতে তারা একাকিত্ববোধ, উদ্বেগ বা মুখচোরা স্বভাবের শিকার হতে পারে।

সমতা বজায় রাখার উপায়

শিশুদের কার্টুন থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়, আবার তা একেবারে অবারিতও রাখা উচিত নয়। সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখলেই কার্টুন হবে আনন্দের উৎস, ক্ষতির নয়।

১. কার্টুন বাছাইয়ের দায়িত্ব অভিভাবকের: শিশুদের জন্য হিংসাত্মক বা দ্রুতগতির কার্টুনের বদলে ধীর গতির শিক্ষামূলক কার্টুন নির্বাচন করা জরুরি।
২. সময় বেঁধে দেওয়া: যারা এখনও স্কুলে যায়নি, তাদের দিনে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টার বেশি কার্টুন দেখতে দেওয়া উচিত নয়। বড় শিশুদের ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্দিষ্ট হওয়া দরকার।
৩. বিকল্প বিনোদন: কার্টুনের পাশাপাশি গল্প বলা, ছবি আঁকা, খেলাধুলা বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
৪. বাস্তব ও কল্পনার পার্থক্য শেখানো: শিশুরা যাতে বুঝতে পারে কার্টুনের জগত বাস্তব নয়, তার জন্য অভিভাবকদের নিয়মিত তাদের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।
৫. শান্ত রাখার অজুহাত নয়: অনেক অভিভাবক শিশুদের শান্ত রাখতে মোবাইল বা টিভি চালু করে দেন। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদে তাদের ক্ষতি করে। তাই ধৈর্য ধরে অন্য বিকল্পে শিশুদের মনোযোগ ঘোরানো উচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

মনোবিদরা বলছেন, কার্টুন দেখার ফলে শিশুদের মস্তিষ্কে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। তবে তা সীমিত না রাখলে উল্টে ক্ষতি হতে পারে। শিশুরা যে বয়সে সামাজিক নিয়ম শিখে নেওয়ার কথা, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম সেই প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।

অন্যদিকে, শিক্ষাবিদদের মতে, আধুনিক কার্টুন সিরিজগুলোকে আরও শিক্ষণীয় করে তোলা দরকার। যাতে শিশুরা শুধু বিনোদন নয়, বরং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিও শিখতে পারে।

কার্টুন শিশুদের জন্য আনন্দ, বিনোদন ও শিক্ষার এক চমৎকার মাধ্যম। তবে অতিরিক্ত কার্টুন দেখা তাদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই অভিভাবকদের উচিত শিশুদের স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করা, সঠিক কার্টুন নির্বাচন করা এবং বিকল্প সামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যকলাপে শিশুদের যুক্ত করা।

পরিশেষে বলা যায়, কার্টুন ভালো—তবে সীমার মধ্যে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সচেতনতার মাধ্যমে শিশুদের জীবনে কার্টুন হতে পারে শেখার এক সুন্দর সোপান, মানসিক চাপের বোঝা নয়।

আরও পড়ুন: কচ্ছপদের মহাউৎসব: কোস্টারিকার Ostional Beach পৃথিবীর এক অনন্য বিস্ময়

Join Our WhatsApp Group For New Update
RELATED ARTICLES

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়