Hara Hachi Bu: খাবার খাওয়ার পর অনেকেরই অভ্যাস হলো প্লেটে এক কণাও ফেলে না রেখে সবটুকু শেষ করে দেওয়া। কারণ, শৈশব থেকেই শোনা যায়—খাবার নষ্ট করা উচিত নয়। যদিও এর ফলে অজান্তেই শরীরে ঢুকে যায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি, যা সময়ের সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি, হজমের সমস্যা, এমনকি নানা ধরনের জীবনধারাজনিত রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সমস্যা এড়ানোর জন্য জাপানিদের এক বিশেষ নিয়ম বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছে—এর নাম ‘হারা হাচি বু’ (Hara Hachi Bu)।
এই অনন্য পদ্ধতিটি শুধু খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না, বরং দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য এবং মানসিক প্রশান্তি অর্জনের পথও সুগম করে।
‘হারা হাচি বু’ কী?
জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জে প্রচলিত এই খাদ্যসংস্কৃতির মূল মন্ত্র হলো—“খাও যতক্ষণ না পেট ৮০ শতাংশ ভরে যায়।” অর্থাৎ পুরোপুরি ভরতি না করে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রেখে খাবার শেষ করতে হবে।
এখানে কিন্তু খাওয়ার পরিমাণ কমানো বা ক্যালোরি গুনে খাওয়ার কথা বলা হয়নি। বরং আনন্দের সঙ্গেই খেতে বলা হচ্ছে, তবে খেয়াল রাখতে হবে শরীরের সঙ্কেতের দিকে। একবার যখন মনে হবে, পেট প্রায় ভরে এসেছে, তখনই থেমে যেতে হবে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই নিয়ম?
১. অতিরিক্ত ক্যালোরি থেকে সুরক্ষা
আমরা অনেকেই খাবার টেবিলে বসে অজান্তেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলি। শরীর যখন ভরতি হওয়ার সঙ্কেত দেয়, তখন পর্যন্ত দেরি হয়ে যায়। ফলে বাড়তি ক্যালোরি জমে ফ্যাটে পরিণত হয়। ‘হারা হাচি বু’ এই অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ রোধ করে।
২. লেপটিন হরমোনের কাজ
শরীরে লেপটিন নামক একটি হরমোন আছে, যা মস্তিষ্ককে জানায় পেট ভরে গেছে। কিন্তু খাবার খাওয়ার গতি দ্রুত হলে লেপটিন নিঃসরণ হওয়ার সময় পাওয়া যায় না। ফলে আমরা খেতেই থাকি। ধীরে খাওয়া এবং ৮০ শতাংশে থেমে যাওয়া শরীরকে সেই সঠিক সঙ্কেত ধরতে সাহায্য করে।
৩. দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য উপকারিতা
গবেষণায় দেখা গেছে, ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘায়ু মানুষ। তাদের সুস্বাস্থ্য এবং বয়সজনিত রোগ কম হওয়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে এই নিয়ম গভীরভাবে যুক্ত।
বিশ্বজুড়ে ‘হারা হাচি বু’-এর প্রভাব
বর্তমানে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষরা এই জাপানি পদ্ধতিকে গ্রহণ করছেন। পশ্চিমা দেশগুলোতে ওজন কমানো এবং ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এর পাশাপাশি এই নিয়মকে জনপ্রিয় করা হচ্ছে। নিউট্রিশনিস্টরাও মনে করেন, এটি আসলে মাইন্ডফুল ইটিং বা সচেতনভাবে খাওয়ার এক অনন্য কৌশল।
কীভাবে মানবেন এই নিয়ম?
১. ধীরে খান – প্রতিটি কণা উপভোগ করুন। দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস শরীরকে সঙ্কেত ধরতে দেয় না।
২. মাঝপথে থামুন – খেতে খেতে মাঝেমাঝে থেমে নিজেকে প্রশ্ন করুন, সত্যিই কি পেট ভরে গেছে? নাকি শুধু সামনে খাবার আছে বলে খাচ্ছেন?
৩. ছোট প্লেটে খাবার নিন – ছোট প্লেট ব্যবহার করলে স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়।
৪. শরীরের ভাষা শুনুন – শরীর যখন বলে “আর দরকার নেই”, তখনই থেমে যান।
৫. অতিরিক্ত লোভ এড়ান – খাবার থাকলেও অকারণে প্লেট ভরতি করবেন না।
অতিরিক্ত খাওয়ার ক্ষতি
- স্থূলতা: ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
- বদহজম: বেশি খেলে হজমতন্ত্রের ওপর চাপ পড়ে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: ইনসুলিন প্রতিরোধ তৈরি হতে পারে।
- হৃদ্রোগের সম্ভাবনা: অতিরিক্ত ক্যালোরি ও ফ্যাট হৃদ্রোগের পথ খুলে দেয়।
- অলসতা ও ক্লান্তি: শরীর ভারি হয়ে কাজ করার আগ্রহ কমে যায়।
জাপানিদের সুস্বাস্থ্যের রহস্য
ওকিনাওয়ার বাসিন্দারা শুধু ‘হারা হাচি বু’ মেনে চলেন না, সঙ্গে তারা খেয়ে থাকেন বেশি পরিমাণে সবজি, সামুদ্রিক মাছ, সয়াবিনজাত খাবার এবং গ্রিন টি। ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি তাদের আসক্তি কম। ফলে তাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্যকর থাকে।
কেন আমাদের মানা উচিত?
আমাদের দেশেও খাবারের অপচয় রোধ করা একটি বড় সামাজিক দায়িত্ব। পাশাপাশি বর্তমান ব্যস্ত জীবনযাত্রায় স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রোগ ক্রমশ বাড়ছে। ‘হারা হাচি বু’ অভ্যাস করলে—
- খাবারের অপচয় কমবে
- শরীর সুস্থ থাকবে
- মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যাবে
- দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি হ্রাস পাবে
‘হারা হাচি বু’ কোনো ডায়েট চার্ট নয়, কোনো কঠোর নিয়মও নয়। এটি কেবল শরীরের কথা শোনার এক সহজ কিন্তু কার্যকর কৌশল। যখন মনে হবে পেট প্রায় ভরে গেছে, তখনই খাওয়া থামিয়ে দিন। এভাবেই জাপানিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সুস্থ, সুখী ও দীর্ঘায়ু জীবন কাটাচ্ছেন।
আজকের দিনে যখন আমাদের জীবনধারা নানা রোগে জর্জরিত, তখন এই ছোট্ট নিয়ম মেনে চলাই হতে পারে সুস্থতার বড় চাবিকাঠি।
আরও পড়ুন: SSC Recruitment: কোন বিষয়ে সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ?