Positive বার্তা (বাংলা)

A teamwork initiative of Enthusiastic people using Social Media Platforms

Homeব্লগবাঁকুড়ার বিস্ময়: শুশুনিয়া পাহাড় - প্রকৃতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অনন্য संगम

বাঁকুড়ার বিস্ময়: শুশুনিয়া পাহাড় – প্রকৃতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অনন্য संगम

Unveiling Susunia: গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন হাঁসফাঁস করছে বাংলা, তখন বাঁকুড়ার কোলে লুকিয়ে থাকা শুশুনিয়া পাহাড় যেন এক শান্তির মরূদ্যান। পাহাড়, ঝর্ণা, ঘন জঙ্গল, সুরঙ্গ, গুহা – প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সম্ভার আপনাকে মুগ্ধ করবেই। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, এই জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী, যা আপনার ভ্রমণকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

শুশুনিয়া পাহাড় যেন এক স্বপ্নিল জগৎ। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনানীর মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়, আর তার বুক চিরে নেমে আসা ঝর্ণার কলতান – এ দৃশ্য মনকে শান্তি এনে দেয়। পাহাড়ের চারপাশের আদিবাসী গ্রামগুলির রঙিন দেওয়াল চিত্র যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। ভেষজ রঙে আঁকা এই ছবিগুলি প্রাগৈতিহাসিক যুগের শিল্পকলার কথা মনে করিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, এখানে রয়েছে প্রাচীন মন্দির এবং ট্রেকিং-এর সুযোগ, যা অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

গরমের শুরুতে, বিশেষত কালবৈশাখীর পর শুশুনিয়া পাহাড় কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকে। এই সময়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পর্যটকদের আনাগোনাও এই সময় কিছুটা বাড়ে। ঐতিহাসিক এই পাহাড়ের পাদদেশে দু’দিন কাটালেই আপনি এখানকার মূল আকর্ষণগুলি ঘুরে দেখতে পারবেন – পাহাড়, ঝর্ণা, শিউলি বোনা এবং ভরতপুর।

বাঁকুড়ার বিস্ময়: শুশুনিয়া পাহাড়

শুশুনিয়া পাহাড়ের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল নরসিংহ মন্দির। পাহাড়ে ওঠার প্রধান রাস্তার পাশেই এই মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে বহু লোককথা ও বিশ্বাস। মন্দিরের ঠিক সামনেই রয়েছে একটি ছোট ঝর্ণা, যা স্থানীয়দের কাছে এক বিস্ময়। শোনা যায়, শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা – এই ঝর্ণা কখনও শুকায় না। এমনকি শীতকালে এই ঝর্ণা থেকে গরম জল এবং গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা জল বের হয়। ঝর্ণার জল একটি পুকুরে এসে জমা হয়, যা স্থানীয়ভাবে গড় নামে পরিচিত। অবাক করার বিষয় হল, ঝর্ণার জল প্রতিনিয়ত পড়া সত্ত্বেও কোনোদিন এই পুকুরের জল একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার উপরে ওঠে না।

ইতিহাস প্রেমীদের জন্য শুশুনিয়া পাহাড় এক গুপ্তধন। পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে একটি দুর্গম গুহায় আজও অক্ষত রয়েছে চন্দ্র বর্মার শিলালিপি, যা এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। এছাড়াও, শুশুনিয়া পাহাড় তার বনজ সম্পদের জন্য বিখ্যাত। পাহাড় জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে নাম না জানা অসংখ্য ভেষজ উদ্ভিদ, যা প্রকৃতির এক অমূল্য দান।

বলা হয়, আজও এই ঝর্ণার উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, নরসিংহ মন্দিরের মহিমাতেই এই ঝর্ণা চিরপ্রবাহী। গরমের তীব্রতা बढ़ने আগে, শুশুনিয়া পাহাড় ভ্রমণের এটাই সেরা সময়। আদিবাসী সংস্কৃতি, প্রাগৈতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ভেষজ উদ্ভিদের সমাহার এবং প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্য – এই সবকিছু মিলিয়ে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড় এক অসাধারণ গন্তব্য।

এখানে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। মরুতবাহা ইকোপার্ক থেকে শুরু করে যুব আবাস, ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাজেটের রাত্রিবাসের সুযোগ উপলব্ধ। কলকাতা থেকে সরাসরি বাঁকুড়া স্টেশনে এসে, সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে করে ছাতনা হয়ে সহজেই শুশুনিয়া পৌঁছানো যায়।

তাই, আর দেরি না করে গরমের ছুটিতে প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টি এবং ইতিহাসের সাক্ষী হতে ঘুরে আসুন বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে। নিশ্চিত থাকুন, এই ভ্রমণ আপনার স্মৃতিতে এক অমলিন ছাপ রেখে যাবে।

আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার লাল মাটিতে জাপানি ক্যারাটের ঢেউ

Join Our WhatsApp Group For New Update
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়