Positive বার্তা (বাংলা)

A teamwork initiative of Enthusiastic people using Social Media Platforms

Homeপ্রযুক্তিসেমিকন্ডাক্টরের নতুন ভোর: ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ কারখানা ভারতকে বিশ্বমঞ্চে তুলছে

সেমিকন্ডাক্টরের নতুন ভোর: ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ চিপ কারখানা ভারতকে বিশ্বমঞ্চে তুলছে

Semiconductor Revolution: ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এক অন্যতম শক্তিশালী দেশ। সফটওয়্যার পরিষেবা, আইটি সাপোর্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিংবা স্টার্টআপ সংস্কৃতিতে ভারত ইতিমধ্যেই একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আধুনিক ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রে যে ক্ষুদ্র অথচ শক্তিশালী উপাদানটি রয়েছে—সেমিকন্ডাক্টর চিপ—সেই ক্ষেত্রে এতদিন পর্যন্ত ভারত বিদেশের উপর নির্ভরশীল ছিল।

সেই চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। সরকার ঘোষিত India Semiconductor Mission এবং দেশজুড়ে একাধিক চিপ ফ্যাব্রিকেশন ইউনিট (Fab) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবেই “মেড ইন ইন্ডিয়া” সেমিকন্ডাক্টর যুগে প্রবেশ করছে।

ভারতের প্রথম দেশীয় চিপ: এক ঐতিহাসিক সূচনা (Semiconductor Revolution)

সম্প্রতি দেশের গবেষক ও প্রকৌশলীরা তৈরি করেছেন প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয় চিপ, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে উপস্থাপন করা হয়। এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, বরং ভারতীয় স্বনির্ভরতার প্রতীক। বহু দশক ধরে ভারতীয় বাজারে ব্যবহৃত প্রায় ৯০% চিপ এসেছে বিদেশ থেকে—মূলত তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা ও চীন থেকে। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে দেশীয়ভাবে তৈরি প্রথম চিপ ভারতকে নতুন আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। এটি ২৮ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি হলেও সরকার আগামী ৫–৭ বছরের মধ্যে উন্নত ৭ ন্যানোমিটার চিপ তৈরি করার রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে।

গুজরাট ও উত্তরপ্রদেশে চিপ কারখানা

ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বিপ্লবের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে গুজরাটের ধোলেরাউত্তরপ্রদেশের জেওর

  • গুজরাটে টাটা ইলেকট্রনিক্স ও তাইওয়ানের PSMC যৌথভাবে একটি বৃহৎ চিপ ফ্যাব তৈরি করছে, যেখানে প্রতি মাসে প্রায় ৫০,০০০ ওয়েফার উৎপাদনের ক্ষমতা থাকবে।
  • উত্তরপ্রদেশে হেসি ও ফক্সকন যৌথভাবে নতুন ফ্যাব স্থাপন করছে, যা উত্তর ভারতের শিল্প অর্থনীতিকে রূপান্তর করবে।

এছাড়াও, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু এবং ওডিশার মতো রাজ্যগুলোতেও সেমি-চিপ প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিস্ফোরণ

সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত মোট দশটি প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এসেছে। এর মাধ্যমে সরাসরি লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

চিপ ডিজাইন, গবেষণা, কোয়ালিটি টেস্টিং এবং উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে দক্ষ প্রকৌশলী প্রয়োজন। এর ফলে শুধু IIT বা NIT নয়, দেশের মধ্যম ও ক্ষুদ্র কলেজ থেকেও প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী সরাসরি নিয়োগ পাচ্ছেন। বেতনও প্রতিযোগিতামূলক—প্রতি বছর গড়ে ৬ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্র

ভারতের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই নিজস্ব চিপ ডিজাইন করেছে।

  • NIT রাউরকেলাPMEC বেরহমপুর একসঙ্গে তৈরি করেছে তিনটি ভিন্ন ধরণের চিপ—যার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহারযোগ্য সেন্সর সার্কিট, নিরাপদ ডেটা এনক্রিপশন কোর, এবং উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মাল্টিপ্লায়ার আইসি উল্লেখযোগ্য।
  • এই ধরনের উদ্ভাবন শুধু শিল্প নয়, প্রতিরক্ষা, টেলিকম ও মেডিকেল সেক্টরে স্বনির্ভরতা বাড়াবে।

টেলিকমে দেশীয় চিপের ব্যবহার

আরও একটি বড় অর্জন হলো, ভারতের তৈরি প্রথম টেলিকম সিস্টেম, যেখানে দেশীয় চিপ ব্যবহৃত হয়েছে, তা TEC সার্টিফিকেশন পেয়েছে। অর্থাৎ টেলিকম নেটওয়ার্কের জন্য এখন বিদেশি চিপের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হবে না। এটি ভারতের নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত স্বাধীনতার দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট

ভারত জানে, শুধু কারখানা বানালেই হবে না—প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। এজন্য বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় ও ল্যাবের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।

  • রামাইয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্রের University at Albany থেকে বিশেষ সেমিকন্ডাক্টর সার্টিফিকেশন কোর্স করতে পারবে।
  • এর ফলে ভারতীয় প্রকৌশলীরা বিশ্বের সর্বাধুনিক চিপ প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করবেন।

অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব

ভারতের শেয়ার বাজারেও এই অগ্রগতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি যেমন Moschip Technologies-এর শেয়ারের দাম প্রায় ১৯% বেড়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছেন—ভারতের সেমি-মিশন দীর্ঘমেয়াদে বড় মুনাফার সম্ভাবনা তৈরি করছে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা (Semiconductor Revolution)

যদিও ভারত বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবুও সামনে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—

  1. অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি নির্ভরশীলতা।
  2. বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে ক্রমাগত বিনিয়োগ।
  3. দক্ষ মানবসম্পদ ধরে রাখা, কারণ বিদেশি কোম্পানিগুলোও ভারতীয় প্রকৌশলীদের টার্গেট করছে।

তবে সরকার ‘Make in India’ উদ্যোগ, আর্থিক প্রণোদনা, এবং বৈদেশিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিকল্পনা করছে।

সেমিকন্ডাক্টর আজকের পৃথিবীর মেরুদণ্ড—স্মার্টফোন থেকে রকেট, গাড়ি থেকে মেডিকেল ডিভাইস—সবকিছুতেই এর উপস্থিতি। এতদিন ভারত ছিল ব্যবহারকারী; এখন ভারত হচ্ছে উৎপাদক

“মেড ইন ইন্ডিয়া” সেমিকন্ডাক্টর অভিযান কেবল একটি শিল্প নয়, এটি ভারতের আত্মনির্ভরতার প্রতীক, অর্থনৈতিক শক্তির চালিকা শক্তি এবং প্রযুক্তিগত ভবিষ্যতের ভিত্তি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারত বিশ্ব সেমিকন্ডাক্টর মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে।

আরও পড়ুন: শিক্ষক দিবসে অনন্য সম্মাননা, লায়ন্স ক্লাবের উদ্যোগে সংবর্ধিত শিক্ষক ও সাংবাদিকরা

Join Our WhatsApp Group For New Update
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়