Overcoming Hardship: দারিদ্র্য কোনো বাধা নয়, বরং তা স্বপ্নপূরণের জ্বালানি হতে পারে—এই কথাটাই যেন অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করে দেখালেন শান্তিনিকেতনের কালীসায়র এলাকার তরুণ ক্রিকেটার দেব ঝা।
বীরভূমের বোলপুরের মাটি থেকে উঠে এসে অনূর্ধ্ব-১৯ স্কুল গেমস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিজের রাজ্য বাংলার প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন দেব। বাবা ভরত ঝা দুধ বিক্রি করে বহু কষ্টে সংসার চালান, কিন্তু চরম আর্থিক অনটনের মাঝেও ছেলেকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। সেই স্বপ্নই আজ দেবকে নিয়ে এল জাতীয় স্তরের আঙিনায়।
সংগ্রাম থেকে সাফল্য: দেবের ক্রিকেট যাত্রা
১২ বছর বয়সে ব্যাট হাতে তুলে নেওয়া বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দেবের কাছে ক্রিকেট আর শুধু খেলা নয়, তা তাঁর ধ্যানজ্ঞান। আর্থিক প্রতিকূলতা থাকলেও তাঁর অদম্য জেদ আর পরিশ্রম হার মানিয়েছে সব বাধাকে। বোলপুরের ইয়ং টাউন ক্লাবের কোচিং সেন্টারে শুরু হয় তাঁর ক্রিকেট প্রশিক্ষণ।
শিক্ষকের ভূমিকা: দেবের জীবনে তাঁর প্রশিক্ষক অরিজিৎ রায় কেবল কোচ নন, তিনি অভিভাবকও। দেবের কথায়, তাঁর কোচই ব্যাট-বল কিনে দিয়ে এবং সাহস জুগিয়ে তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছতে সাহায্য করেছেন। কোচের কাছে তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞ।
একের পর এক ধাপ: স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেট থেকে শুরু করে জেলা পর্যায় এবং স্কুল লেভেলে ধারাবাহিক দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জোরেই দেব জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ করে নিতে পেরেছেন।
কোচের গর্ব, দেবের স্থির লক্ষ্য
দেবের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তাঁর কোচ অরিজিৎ রায়। তিনি মনে করেন, বেশ কয়েক বছর পর তাঁর ক্লাব এবং ক্যাম্পের একজন ছাত্র এই স্তরে পৌঁছল, যা অন্যান্য ক্রিকেটারদেরও অনুপ্রাণিত করবে। কোচের বার্তা একটাই—”সুযোগ সবসময় আসে না, তাই যখন সুযোগ মিলেছে সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে।”
অন্যদিকে, এই তরুণ প্রতিভা কিন্তু উচ্ছ্বাসের মাঝেও অত্যন্ত সংযত এবং বাস্তববাদী। ৪ ডিসেম্বর থেকে হরিয়ানায় শুরু হতে চলা এই প্রতিযোগিতার জন্য এখন তিনি পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য:
“অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বাংলার হয়ে খেলছি যখন, প্রথম লক্ষ্য থাকবে দলের হয়ে প্রচুর রান করা ও দলকে জেতানো।”
অপেক্ষা সেই স্বপ্নের দিনের
বাবা ভরত ঝা-র চরম কষ্ট আর নিজের একনিষ্ঠ পরিশ্রমের ফসল এই সাফল্য। দেব ঝার লড়াই প্রমাণ করে দিয়েছে যে, সুযোগের অপেক্ষায় বসে না থেকে সুযোগ তৈরি করাই হলো আসল সার্থকতা। বোলপুর থেকে কলকাতা, কোচ, প্রতিবেশী, স্কুল এবং এলাকাবাসী—সকলেই আজ দেবকে নিয়ে গর্বিত। এখন শুধু অপেক্ষা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের, যখন জাতীয় স্তর পেরিয়ে দেব ঝা আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন। লক্ষ্য যখন স্থির, তখন সাফল্য হাতের মুঠোয় ধরা দেবেই।
আরও পড়ুন: বিশ্বের প্রথম ১ কিলোমিটার উঁচু অট্টালিকা: জেদ্দা টাওয়ার





