Jadav Malahi: ভারতের আসামের উদালগুড়ি জেলার গৌর মহল নামক একটি গ্রামে জন্ম নেওয়া জাদব মলাহী, যিনি ‘বনমানুষ’ হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রকৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য অসাধারণ অবদানের কারণে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন। এই মানুষটি একসময় নিঃসঙ্গভাবে একটি মাটির টুকরো থেকে একটি ঘন বন তৈরি করেছেন, যা আজ একটি প্রকৃতির রক্ষাকর্তার গল্প।
বন তৈরি করার গল্প (Jadav Malahi)
জাদব মলাহী ১৯৭৯ সালে একটি মাটির টুকরো কিনেছিলেন, যেখানে তখন শুধু শুকনো মাটি এবং কিছু বিচ্ছিন্ন গাছ ছিল। তিনি সেই জায়গায় গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। এটি শুরু হয়েছিল একটি একক প্রচেষ্টার মাধ্যমে। তিনি প্রতি দিন অসংখ্য গাছের বীজ সংগ্রহ করতেন এবং সেই বীজগুলি মাটিতে রোপণ করতেন। জাদবের প্রচেষ্টার ফলে ৩০ বছর পরে সেই স্থানটি আজ ১,৩৭০ একর বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণের আন্দোলন
জাদব মলাহীর উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র গাছ লাগানো নয়, বরং একত্রে কাজ করা। তিনি স্থানীয় যুবকদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা তৈরিতে কাজ করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বনাঞ্চলকে সংরক্ষণ করা এবং মানুষের মাঝে পরিবেশ রক্ষার একটি সংস্কৃতি তৈরি করা। তিনি বলেন, “আমরা যদি আমাদের বনকে রক্ষা না করি, তবে এটি আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।”
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
জাদব মলাহী শুধুমাত্র গাছ লাগানোর উপরই সীমাবদ্ধ থাকেননি; তিনি স্থানীয় প্রাণীদের রক্ষার জন্যও কাজ করেছেন। তাঁর বনাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির গাছ এবং প্রাণী দেখা যায়। জাদবের উদ্যোগে অনেক প্রজাতির পাখি, স্তন্যপায়ী এবং অন্যান্য প্রাণী ফিরে এসেছে। এই বনটি এখন একটি জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
জাদব মলাহীর পরিবেশ রক্ষার প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন পুরস্কার এবং সম্মাননা অর্জন করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার’। তিনি বহু দেশের সম্মেলনে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন, যেখানে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
চ্যালেঞ্জ
যদিও জাদবের কাজ প্রশংসনীয়, তবে তাঁর প্রচেষ্টা সহজ ছিল না। তিনি নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। স্থানীয় কিছু মানুষের বিরোধিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং বনাঞ্চলের সুরক্ষায় যথাযথ সরকারি সহায়তার অভাব—এসব জটিলতাকে তিনি মোকাবেলা করেছেন। তবে তাঁর দৃঢ় সংকল্প ও ভালোবাসা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
শিক্ষা এবং অনুপ্রেরণা
জাদব মলাহীর গল্প শুধু একটি পরিবেশ রক্ষার প্রচেষ্টা নয়; এটি একটি শিক্ষা। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন যে একজন ব্যক্তি কীভাবে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারেন এবং সমাজকে পরিবর্তন করতে পারেন। তাঁর এই উদ্ভাবনী চিন্তা ও কাজ আজ যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, “প্রকৃতি আমাদের সকলের, এবং আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে।”
বর্তমান পরিস্থিতি
আজ, জাদব মলাহীর বন পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম বনগুলির মধ্যে একটি। এটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও সহায়তা করছে। পর্যটকরা এখানে আসেন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং জাদবের সঙ্গে কথা বলতে। স্থানীয় জনগণের মধ্যে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা তাঁদের জীবিকার উন্নতি করছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জাদব মলাহী ভবিষ্যতে আরও বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিনি একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন, যা পরিবেশ সচেতনতা এবং বন সংরক্ষণের জন্য কাজ করবে। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কর্মশালার আয়োজনের মাধ্যমে তাদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে চান।
জাদব মলাহীর গল্প আমাদের শিখিয়েছে যে, একক প্রচেষ্টার মাধ্যমেও বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাঁর অবদানের জন্য আজকের পৃথিবী একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। “বনমানুষ” আজ শুধু একজন ব্যক্তি নয়; তিনি আমাদের সকলের জন্য একটি উদাহরণ, যিনি প্রকৃতির রক্ষাকর্তা এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো।
আরো পড়ুন: চন্দ্রযান-৪ এবং ভারতের মহাকাশ অভিযান: একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ