Positive বার্তা (বাংলা)

A teamwork initiative of Enthusiastic people using Social Media Platforms

Homeব্লগপুকুরে ইলিশ চাষ: একটি স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার কথা

পুকুরে ইলিশ চাষ: একটি স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার কথা

Indian Scientists: ইলিশ, বাঙালির এক আবেগের নাম। এর অসাধারণ স্বাদ আর মন মাতানো গন্ধের জন্য এটি শুধু একটি মাছ নয়, এটি একটি অনুভূতি। কিন্তু এই সুস্বাদু মাছটি কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়েই পাওয়া যায়, যা ইলিশপ্রেমীদের জন্য মন খারাপের কারণ। যদি সারা বছর ইলিশের স্বাদ পাওয়া যেত, তবে কেমন হতো? এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। ব্যারাকপুরের সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিফ্রি) গবেষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পুকুরে ইলিশ চাষের স্বপ্ন এখন বাস্তব রূপ নিতে চলেছে।

পুকুরে ইলিশ চাষ: চ্যালেঞ্জ এবং অগ্রগতি

ইলিশের জীবনচক্র বেশ জটিল। সাধারণত, ইলিশ তার জীবনের বেশিরভাগ সময় সমুদ্রে কাটায়। বংশবৃদ্ধির জন্য এরা মিষ্টি জলের নদীতে ফিরে আসে। এখানেই এরা ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা হয়ে বেড়ে ওঠার পর আবার সমুদ্রে ফিরে যায়। এই বিশেষ জীবনচক্রের কারণে পুকুরে বা বদ্ধ পরিবেশে ইলিশ চাষ করা অত্যন্ত কঠিন। তবে সিফ্রির বিজ্ঞানীরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এনেছেন।

গবেষকদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইলিশকে বদ্ধ জলাশয়ের পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া, কৃত্রিম প্রজনন ঘটানো এবং সম্পূর্ণ জীবনচক্র পুকুরেই সম্পন্ন করা। এই গবেষণার শুরু হয়েছিল সেই ১৯৩৮ সালে, যখন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সুন্দারলাল হোরা বলেছিলেন যে ইলিশ বদ্ধ জলাশয়েও বেঁচে থাকতে পারে। এরপর গত ৩০-৪০ বছর ধরে বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। ২০১২ সালে, একটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ইলিশকে নদী থেকে পুকুরে এনে কৃত্রিম প্রজননের চেষ্টা করেন, কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে সেই কাজ মাঝপথে থেমে যায়।

২০২১ সালে আবারও গবেষণা শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, পুরুষ ইলিশ সহজেই প্রজননে সক্ষম হলেও স্ত্রী ইলিশের বৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত ধীর। সাধারণত, নদীতে ১.৫ থেকে ২ বছরে স্ত্রী ইলিশ ডিম পাড়ার জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু পুকুরে তাদের পরিপক্ব হতে আরও বেশি সময় লাগে। বিজ্ঞানীরা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ব্যবহার করে দেখেন যে, ডিম্বাশয়ের গঠন প্রায় সম্পূর্ণ হলেও ডিম্বাণু পুরোপুরি পরিপক্ব হয় না। ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে ডিম্বাণু নিষিক্ত করার চেষ্টা করা হলেও তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়।

স্বাদ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, পুকুরের ইলিশের স্বাদ কি নদীর ইলিশের মতো হবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা একটি অর্গানোলেপটিক টেস্ট বা স্বাদ পরীক্ষা পরিচালনা করেন। প্রায় ৫০ জন ব্যক্তিকে একই পদ্ধতিতে রান্না করা নদীর ও পুকুরের ইলিশ খেতে দেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায়, গন্ধ, স্বাদ, এবং টেক্সচারে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। বিজ্ঞানীরা জানান, ইলিশের স্বাদ মূলত নির্ভর করে কিছু ফ্যাটি অ্যাসিডের ওপর, যা তারা প্ল্যাঙ্কটন নামক এক ধরনের খাদ্য থেকে গ্রহণ করে। যদি পুকুরের জলে সঠিক খাদ্যের ব্যবস্থা করা যায়, তবে স্বাদের কোনো পরিবর্তন হবে না।

যদিও আর্থিক সংকটের কারণে গবেষণা আপাতত কিছুটা থমকে আছে, বিজ্ঞানীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে, সম্পূর্ণ সাফল্য পেতে আরও প্রায় ১০-১৫ বছর নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণা প্রয়োজন।

ইলিশের ভবিষ্যৎ

যদি এই গবেষণা পুরোপুরি সফল হয়, তবে ইলিশপ্রেমীদের জন্য এটি এক দারুণ খবর হবে। এর ফলে সারা বছর বাজারে ইলিশ পাওয়া যাবে। ইলিশ আর কেবল বর্ষার প্রতীক্ষায় থাকবে না, এটি হয়ে উঠবে একটি সহজলভ্য খাদ্য। এই সাফল্য শুধু বাঙালির উৎসবকে নয়, প্রতিদিনের রান্নাঘরকেও আরও আনন্দময় করে তুলবে।

আরও পড়ুন: করণ জোহরের ‘হোমবাউন্ড’ এবার অস্কারের মঞ্চে!

Join Our WhatsApp Group For New Update
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়