India Set to Make History: ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) আবারও ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখতে চলেছে। ২০২৭ সালে দেশটি লঞ্চ করবে এক অভূতপূর্ব মহাকাশ অভিযান— চন্দ্রযান–৪, যার লক্ষ্য শুধুমাত্র চাঁদে অবতরণ নয়, বরং চাঁদের মাটি ও শিলা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। এটি হবে ভারতের মহাকাশ গবেষণার এক নতুন মাইলফলক, যা বিশ্বে মাত্র তিনটি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) এবং চীন—এর পর ভারতকে এই অভিজাত ক্লাবে নিয়ে যাবে।
চন্দ্রযান–৪ মিশনের লক্ষ্য
চন্দ্রযান–৪ মিশনের মূল উদ্দেশ্য হলো চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণ করা, সেখানকার চন্দ্রপৃষ্ঠের মাটি ও শিলা সংগ্রহ করা এবং নিরাপদভাবে সেই নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। এই মিশন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় এক বিশাল প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ, কারণ এটি কেবল অবতরণ নয়— ‘Sample Return Mission’—যা মানে, মহাকাশযানকে ফিরে আসতেও হবে।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মিশনে থাকবে একাধিক মডিউল—
- ল্যান্ডার মডিউল (LM): চাঁদে অবতরণ করে নমুনা সংগ্রহ করবে।
- অ্যাসেন্ট মডিউল (AM): ল্যান্ডার থেকে মাটি ও পাথরের নমুনা নিয়ে চাঁদের কক্ষপথে উঠবে।
- অরবিটার রিটার্ন মডিউল (RM): চাঁদের কক্ষপথে থেকে নমুনা গ্রহণ করবে এবং তা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে।
এই মিশনটি হবে ভারতের প্রথম ইন্টারপ্ল্যানেটারি রিটার্ন মিশন, যা ভবিষ্যতের মঙ্গল এবং গ্রহাণু অভিযানের জন্যও ভিত্তি তৈরি করবে।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই মিশন?
চাঁদের মাটি ও পাথর পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা মানে বিজ্ঞানীদের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। এই নমুনাগুলোর মাধ্যমে জানা যাবে—
- চাঁদের গঠন ও ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস
- চাঁদের মেরু অঞ্চলের বরফ, খনিজ ও জলের উপস্থিতি
- ভবিষ্যতে মানব বসতি স্থাপনের সম্ভাবনা
চাঁদ শুধু এক মহাজাগতিক উপগ্রহ নয়, এটি পৃথিবীর ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চন্দ্রযান–৪ এর মাধ্যমে সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণ করলে জানা যাবে, কীভাবে চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল, এর অভ্যন্তরীণ গঠন কেমন, এমনকি পৃথিবী–চাঁদের যৌথ বিকাশ প্রক্রিয়া সম্পর্কেও নতুন তথ্য মিলতে পারে।
ইসরোর প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জ
চন্দ্রযান–৪ মিশনকে সফল করতে ইসরো এখন থেকেই ব্যস্ত গবেষণা ও প্রস্তুতিতে। আগের মিশনগুলির অভিজ্ঞতা—বিশেষত চন্দ্রযান–৩–এর সাফল্য—এই নতুন অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চন্দ্রযান–৩-এর ‘বিক্রম ল্যান্ডার’ ও ‘প্রজ্ঞন রোভার’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে ভারতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রমাণ করেছিল।
চন্দ্রযান–৪ এ সেই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করা হচ্ছে। বিশেষ করে—
- উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম
- নতুন প্রজন্মের রকেট থ্রাস্টার ও রিটার্ন প্রপালশন মডিউল
- নিরাপদ স্যাম্পল হ্যান্ডলিং ও সিলিং প্রযুক্তি
এইসব ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসরো নিশ্চিত করতে চায় যেন চাঁদের মাটি পৃথিবীতে পৌঁছানোর পথে কোনোভাবেই দূষিত না হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের সম্ভাবনা
এখন পর্যন্ত কেবল তিনটি দেশ চাঁদের মাটি পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে—
- যুক্তরাষ্ট্র (Apollo Missions, 1969–1972)
- সোভিয়েত ইউনিয়ন (Luna Missions, 1970–1976)
- চীন (Chang’e 5 Mission, 2020)
ভারত চতুর্থ দেশ হিসেবে এই তালিকায় নাম তুললে তা শুধু প্রযুক্তিগত গৌরব নয়, বরং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেও এক বিপ্লব ঘটাবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
চন্দ্রযান–৪ মিশনে ইসরো আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় আগ্রহী। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে NASA, ESA (European Space Agency) এবং জাপানের JAXA–র সঙ্গে যৌথ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
চন্দ্রযান–৪–এর সফলতা ভারতের ‘Deep Space Exploration’ প্রোগ্রামের পথ খুলে দেবে। ভবিষ্যতে ভারত মঙ্গলগ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহ, গ্রহাণু অনুসন্ধান, এমনকি চাঁদের উপনিবেশ প্রকল্প–এও যুক্ত হতে পারে।
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য
ইসরোর চেয়ারম্যান ড. এস. সোমনাথ বলেছেন—
“চন্দ্রযান–৪ শুধুমাত্র একটি মিশন নয়, এটি ভারতের বৈজ্ঞানিক আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। আমরা এবার শুধু চাঁদে পৌঁছব না, চাঁদের একটি অংশ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনব।”
ভারতের মহাকাশ গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই মিশন ভবিষ্যতে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগাবে, যাতে তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়।
চন্দ্রযান–৪ শুধু এক মহাকাশ অভিযান নয়—এটি ভারতের উদ্ভাবনী শক্তি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রতীক। চাঁদের অজানা রহস্য উন্মোচনে এটি হতে চলেছে এক মহাজাগতিক অধ্যায়, যা বিশ্বজুড়ে ভারতকে গর্বিত করবে।
চাঁদের ধূলিকণায় ভারতের পতাকার ছাপ পড়েছে আগেই, এবার সেই চাঁদের মাটি আসবে ভারতের গবেষণাগারে—
আর তাতেই লেখা হবে নতুন ইতিহাসের অধ্যায় – “চন্দ্রযান–৪: চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ভারতের প্রত্যাবর্তন।”
Read More: সূর্যের আলোয় রান্না!—রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে বিশ্বের বৃহত্তম সৌর রান্নাঘর





