Positive বার্তা (বাংলা)

A teamwork initiative of Enthusiastic people using Social Media Platforms

Homeব্লগবাংলার দুর্গাপুজোর ইতিহাস: একটি ঐতিহ্যের রূপায়ণ

বাংলার দুর্গাপুজোর ইতিহাস: একটি ঐতিহ্যের রূপায়ণ

History of Durga Puja in Bengal: উমার বাপের বাড়ি আসার সময় হয়ে গেল। ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে’ আলোক মঞ্জির বেজে উঠেছে। দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। আগামীকাল থেকে শুরু হবে নবরাত্রি, যা শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এক মিলনোৎসব। গোটা বাংলা সেজে উঠেছে মেয়েকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। কিন্তু আপনি কি জানেন বাংলার এই ঐতিহ্যশালী দুর্গাপুজোর ইতিহাস? আসুন, আমরা এই আদি উৎসবের সূচনা, বিবর্তন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

দুর্গাপুজোর আদি রূপ (History of Durga Puja)

দুর্গাপুজোর ইতিহাস খুব প্রাচীন। এটি মূলত দেবী দুর্গার মহিষাসুরবধের সাথে জড়িত। পুরাণ অনুযায়ী, বসন্তকাল হচ্ছে দেবী দুর্গার পুজো করার আসল সময়। তবে রামচন্দ্র রাবণকে বধ করার জন্য দেবীর অকালে আবাহন করেন। রাম যে দুর্গাকে পুজো করেছিলেন, তাঁর দশটি হাত রয়েছে এবং তিনি মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। তাই দুর্গোৎসবকে আরেক নাম দেয়া হয় ‘অকাল বোধন’।

দেবী দুর্গা এক প্রাচীন দেবী, যাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রাচীন সংস্কৃতির মধ্যে বহু তথ্য পাওয়া যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এটি প্রতিস্থাপনিত হয়েছে যে, দেবী দুর্গার পূজার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যদিও এটি নিয়ে বিশেষ করে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

ইতিহাসের প্রথম দিক

বাংলাদেশের ধনী বাড়িগুলোতে মোঘল আমল থেকেই দুর্গাপুজোর সূচনা ঘটেছিল। এই পুজোর শুরু কবে? ধারণা করা হয় ১৫০০ শতকের প্রথম দিকে দিনাজপুর মালদার জমিদার প্রথম এই পুজো শুরু করেছিলেন। তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজোটি পারিবারিকভাবে শুরু করেছিলেন। তবে দেবী দুর্গার রূপ সম্পর্কে বিভিন্ন আখ্যান আছে, যেখানে দেবীর বাহন সাদা বাঘ এবং সবুজ সিংহ, আর দেবীর চোখ গোলাকার বলা হয়েছে।

আরো একটি জনপ্রিয় গাঁথা অনুযায়ী, বাংলার দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ অথবা নদীয়ার ভবানন্দ মজুমদার হাত ধরে।

বারোয়ারী দুর্গাপুজোর সূচনা

বারোয়ারী দুর্গাপুজোর একটি বিশেষ ইতিহাস আছে। এই পুজো বারোজন বন্ধু মিলে শুরু করেছিলেন। ১৭৯০ সালে ১২ জন একত্রিত হয়ে গুপ্তিপাড়ায় প্রথমবার এই পুজো শুরু করেন। এই পুজোটিকে বলা হতো “বারো পল পুজো”।

কলকাতায় প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ। ব্রিটিশ আমলে কলকাতার একাধিক জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো পালিত হত। নবকৃষ্ণ দেবের বাড়ির দুর্গাপুজো এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, এটি একটি গ্র্যান্ড ফিস্টে পরিণত হয়েছিল।

কলকাতার প্রথম বারোয়ারী পুজোর আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে ১৯১০ সালে। বাগবাজারে সনাতন ধর্মতসাহিনী সভার উদ্যোগে এই পুজো শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় এই পুজো অনুষ্ঠিত হয় এবং এরপর থেকেই দুর্গাপুজোর প্রচলন সারা বাংলা জুড়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

মহালয়া

মহালয়ার দিন দুর্গার মর্ত্যে আগমন ঘটে। এই দিনটি দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মহালয়ায় শ্রাদ্ধ এবং দেবীর আগমনের প্রার্থনা করা হয়। এটি পুজার প্রথম দিন হিসেবে গন্য হয় এবং এটি পূজার প্রস্তুতির সূচনা করে।

আধুনিক যুগের দুর্গাপুজো

বর্তমানে দুর্গাপুজো একটি সর্বজনীন উৎসব হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দশকে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, থিমের পুজো এবং সৃজনশীল প্যান্ডেল নির্মাণের প্রবণতা বেড়েছে। এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে কনটেম্পোরারি আর্ট, প্রযুক্তি, এবং ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত।

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

এই বছর দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি বাংলার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, যা আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সমৃদ্ধির প্রমাণ।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব (History of Durga Puja)

দুর্গাপুজো বাংলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উৎসব চলাকালীন সময়ে পর্যটকদের আগমন ঘটে, যা স্থানীয় ব্যবসার উন্নতি ঘটায়। রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, এবং অন্যান্য ব্যবসায়ে একটি দারুণ জমজমাট অবস্থা বিরাজ করে।

এছাড়াও, দুর্গাপুজোর সময় সমাজের দুঃস্থ মানুষের জন্য খাদ্য বিতরণ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানের প্রথা বিদ্যমান। এটি সামাজিক সেবা এবং মানবতার উদাহরণ

দুর্গাপুজো কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অঙ্গ। এটি মানবিক সম্পর্ক, সমবায় এবং একতার প্রতীক। যখন গোটা বাংলা দুর্গাপুজোর আলোয় আলোকিত হয়, তখন আমরা সবাই একত্রিত হয়ে এক নতুন শক্তি ও উৎসাহের অনুভূতি নিয়ে জীবনযাপন করি।

বাংলার দুর্গাপুজোর ইতিহাস একটি সাহসী, শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ জাতির প্রতীক, যা আমাদের হৃদয়ে চিরকাল স্থান করে নিয়েছে। তাই, আসুন আমরা এই ঐতিহ্যকে যথাযথভাবে রক্ষা করি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিই।

আরো পড়ুন: Positive বার্তার উদ্যোগে এবং ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের সহযোগিতায় লাইভ আলোচনা সভা “বিকাশ টক” (Vikash Talk)

Join Our WhatsApp Group For New Update
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়