Positive বার্তা (বাংলা)

A teamwork initiative of Enthusiastic people using Social Media Platforms

Homeপ্রযুক্তিভারতে ইঞ্জিনিয়ার্স ডে ২০২৫: উদ্ভাবন, দায়িত্ব ও জাতি গঠনের অঙ্গীকার

ভারতে ইঞ্জিনিয়ার্স ডে ২০২৫: উদ্ভাবন, দায়িত্ব ও জাতি গঠনের অঙ্গীকার

Engineer’s Day in India 2025: প্রতিবছর ১৫ই সেপ্টেম্বর ভারত জুড়ে পালিত হয় ইঞ্জিনিয়ার্স ডে। এ দিনটি মহান প্রকৌশলী, দার্শনিক ও দৃষ্টান্তমূলক প্রশাসক স্যার মোক্ষগুন্ডম বিশ্বেশ্বরাইয়া (১৮৬১–১৯৬২)-এর জন্মবার্ষিকীকে স্মরণ করে পালন করা হয়। তাঁর অসামান্য অবদান ভারতীয় প্রকৌশল, কৃষি সেচব্যবস্থা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্পোন্নয়নের ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা আছে।

এই বছর ইঞ্জিনিয়ার্স ডে-র মূল প্রতিপাদ্য হলো— “Sustainable Growth and Global Impact-এর জন্য প্রকৌশল”, অর্থাৎ এমন এক ভবিষ্যৎ যেখানে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হবে পরিবেশবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈশ্বিক উন্নতির চালিকাশক্তি।

স্যার এম. বিশ্বেশ্বরাইয়ার উত্তরাধিকার

১৮৬১ সালে কর্ণাটকের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া স্যার এম. বিশ্বেশ্বরাইয়া আজও প্রকৌশলীদের কাছে এক অনন্য প্রেরণা। তিনি পুনে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের এক কিংবদন্তি প্রকৌশলী হয়ে ওঠেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে—

  • মাইসোরে নির্মিত কৃষ্ণ রাজ সাগর বাঁধ (Krishna Raja Sagar Dam), যা দক্ষিণ ভারতের কৃষিকাজে বিপ্লব ঘটিয়েছিল।
  • স্বয়ংক্রিয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ গেট উদ্ভাবন, যা পরবর্তীতে বহু দেশে ব্যবহৃত হয়েছে।
  • মাইসোর রাজ্যের দেওয়ান (১৯১২–১৯১৮) হিসেবে শিক্ষা, শিল্প, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে অসাধারণ উন্নয়ন।
  • মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও শিল্পায়নকে উৎসাহ দেওয়া।

তাঁর অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ১৯৫৫ সালে ভারতরত্ন প্রদান করা হয়।

আজকের দিনে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তাৎপর্য

ইঞ্জিনিয়ারিং শুধু সেতু, রাস্তা বা বাঁধ নির্মাণে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমান যুগে এটি সফটওয়্যার উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বায়োটেকনোলজি, মহাকাশ প্রযুক্তি, সবুজ জ্বালানি ও ডিজিটাল অবকাঠামোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

ভারতের ইঞ্জিনিয়াররা আজ বিশ্বজুড়ে অবদান রাখছেন—

  • মহাকাশ প্রযুক্তি: ইসরোর চন্দ্রযান ও গগনযান মিশন প্রমাণ করেছে ভারতীয় প্রকৌশলীদের দক্ষতা।
  • ডিজিটাল ইন্ডিয়া: ফিনটেক, এআই, সাইবার সিকিউরিটি থেকে শুরু করে স্টার্টআপ জগতে ভারতীয় প্রকৌশলীদের দাপট।
  • পরিষ্কার জ্বালানি: সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুশক্তি প্রকল্পে প্রকৌশলীরা টেকসই ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন।
  • অবকাঠামো: স্মার্ট সিটি, এক্সপ্রেসওয়ে ও বুলেট ট্রেন ভারতীয় প্রকৌশলীদের কৃতিত্বে রূপ নিচ্ছে।

উদযাপন ২০২৫

এই বছর ইঞ্জিনিয়ার্স ডে উপলক্ষে সারা ভারতে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে—

  • সেমিনার ও কনফারেন্স: আইআইটি, এনআইটি এবং রাজ্য স্তরের কলেজগুলোতে নবীন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা।
  • পুরস্কার প্রদান: দ্য ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া) বিশিষ্ট প্রকৌশলীদের সম্মাননা প্রদান করছে।
  • হ্যাকাথন ও কর্মশালা: তরুণ উদ্ভাবকদের পরিবেশ ও সমাজকেন্দ্রিক প্রকল্প তৈরিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
  • বিশ্বেশ্বরাইয়ার প্রতি শ্রদ্ধা: কর্ণাটকে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ও বক্তৃতার আয়োজন হয়েছে।

শিল্প ও শিক্ষাবিদদের মন্তব্য

  • অনীতা দত্ত, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ: “ইঞ্জিনিয়ারিং তখনই সার্থক যখন তা টেকসই হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের আজ থেকেই দায়িত্বশীল নির্মাণ শুরু করতে হবে।”
  • রাহুল সেন, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার: “আজকের ইঞ্জিনিয়ারদের দায়িত্ব শুধু প্রযুক্তি উদ্ভাবন নয়, সেই প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণে কাজে লাগানো।”
  • অর্পিতা ঘোষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার: “রাস্তা থেকে মেট্রো রেল, বাঁধ থেকে সেতু—ভারতের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকৌশলীদের হাত ধরে হয়েছে।”

আধুনিক ভারতের ইঞ্জিনিয়ারদের চ্যালেঞ্জ

যদিও ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের অবদান অমূল্য, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে—

  1. শিক্ষা ও শিল্পের ফারাক – অনেক স্নাতক চাকরির জন্য প্রস্তুত নয়। আধুনিক পাঠক্রম প্রয়োজন।
  2. পরিবেশগত চাপ – শিল্পায়ন বাড়লেও প্রকৃতি রক্ষা করা এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
  3. গ্রামীণ অবকাঠামো ঘাটতি – শহরের সঙ্গে গ্রামের ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে।
  4. বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা – বিশ্বমানের দক্ষতা অর্জন করে ভারতকে উদ্ভাবনের কেন্দ্র করতে হবে।

সরকারি উদ্যোগ

ভারত সরকার ইঞ্জিনিয়ারদের সুযোগ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে—

  • মেক ইন ইন্ডিয়া: দেশীয় উৎপাদন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জোর।
  • স্টার্টআপ ইন্ডিয়া: তরুণ প্রকৌশলীদের উদ্যোগকে আর্থিক সহায়তা।
  • স্কিল ইন্ডিয়া মিশন: আধুনিক দক্ষতায় প্রশিক্ষণ।
  • ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন: অবকাঠামোতে বিশাল বিনিয়োগ।

বিশ্বে ভারতীয় প্রকৌশলীদের সুনাম

সিলিকন ভ্যালি থেকে নাসা পর্যন্ত ভারতীয় প্রকৌশলীরা আজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সুন্দর পিচাই (গুগল), সত্য নাডেলা (মাইক্রোসফট)-এর মতো বিশ্বনেতারা ভারতীয় মেধারই প্রতিফলন।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা

ইঞ্জিনিয়ার্স ডে কেবল শ্রদ্ধাজ্ঞাপন নয়, তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানে ও প্রযুক্তিতে আগ্রহী করার দিন। ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ডিজিটাল বিপ্লব ও সবুজ শক্তির স্বপ্ন পূরণ হবে নতুন প্রজন্মের প্রকৌশলীদের হাত ধরে।

ভারতে ইঞ্জিনিয়ার্স ডে কেবল স্যার এম. বিশ্বেশ্বরাইয়ার জন্মবার্ষিকী স্মরণ নয়, বরং এটি উদ্ভাবন, দায়িত্ব ও জাতি গঠনের উৎসব। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের অবদান অমূল্য। আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত— প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণে কাজে লাগানো, পরিবেশ রক্ষা করা এবং একটি স্মার্ট, সবুজ ও শক্তিশালী ভারত গড়া।

আরও পড়ুন: দুর্গাপুরের শর্ট ফিল্ম ‘বিন্দু’-র অনন্য সাফল্য: সেরা শিশু শিল্পীর সম্মান জয়

Join Our WhatsApp Group For New Update
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়