Bankura Duo Conquers: বাঁকুড়ার দুই অদম্য কন্যা, ডাঃ সুনীতা বাগদী এবং শিক্ষিকা মুন্না পাল, লাদাখের পৃথিবীর সর্বোচ্চ মোটরবাইক চলাচলের উপযোগী গিরিপথ উমলিঙ লা জয় করে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। তাঁরা যুগ্মভাবে এই কৃতিত্ব অর্জন করে প্রথম বাঙালি মহিলা অভিযাত্রী হিসেবে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নিজেদের নাম খোদাই করেছেন। তাঁদের এই ঐতিহাসিক সাফল্য বাংলার নারীশক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
অভিযানের সূচনা ও পথচলা
বাঁকুড়া এক্সপ্লোরেশন নেচার একাডেমির সদস্য সুনীতা বাগদী (বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক) এবং মুন্না পাল (বাঁকুড়া মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা) চলতি বছরের ৩ অক্টোবর তাঁদের দুই সহযাত্রী, ব্যবসায়ী শেখ আলিমুদ্দিন এবং শিক্ষক সুকান্ত পাল-এর সঙ্গে আলাদা আলাদা বাইকে এই চ্যালেঞ্জিং অভিযানের উদ্দেশে রওনা হন।
তাঁদের যাত্রা শুরু হয় শ্রীনগর থেকে, এরপর কার্গিল ও লে হয়ে তাঁরা এগিয়ে চলেন। টানা ১৪ দিনের দীর্ঘ এবং প্রতিকূল যাত্রা শেষে, গত ১৬ অক্টোবর, এই চার অভিযাত্রী দল লাদাখের ১৯,০২৪ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত উমলিঙ লা গিরিপথে পৌঁছান। পথে তাঁরা সিয়াচেন বেস ক্যাম্পও ছুঁয়ে যান। মুন্না পাল দলের মধ্যে একমাত্র অভিযাত্রী ছিলেন, যিনি স্কুটার চালিয়ে এই গিরিপথ জয় করেন, যা তাঁর কৃতিত্বকে আরও ব্যতিক্রমী করে তোলে।
সাফল্যের স্বীকৃতি ও অভিযাত্রীদের অনুভূতি
গত ২৫ অক্টোবর, সুস্থ শরীরে বাঁকুড়ায় ফিরে আসার পর, অতি সম্প্রতি এই দুই মহিলা অভিযাত্রীর কাছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস থেকে তাঁদের স্বীকৃতির শংসাপত্র এসে পৌঁছায়।
এই সাফল্যের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সুনীতা বাগদী জানান, “২০১৯ সালে ট্রেকিং করেছিলাম, কিন্তু বাইক চালিয়ে লাদাখে যাওয়ার ইচ্ছা অনেক দিনের ছিল। সেই সুযোগ আসতেই বাইক কিনে অভিযানে বেরিয়ে পড়ি। শুরুতে ভয় পেলেও, পরবর্তীকালে ভয়ের থেকে ইচ্ছাশক্তি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। দলের অন্যদের সাহস জুগিয়ে যাওয়ার ফলেই আমাদের অভিযান সফল হয়েছে। এই কাজের জন্য ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস স্বীকৃতি দেবে, তা ভাবিনি। সেই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।” তিনি আরও বলেন, সুযোগ পেলে ভবিষ্যতেও এমন অভিযানে অংশ নিতে চান।
অন্যদিকে, মুন্না পাল বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের বাঁকুড়ার মেয়েদের নয়, এই জয় সমগ্র রাজ্যের মেয়েদের। অভিযাত্রী দলের প্রধান আলিমুদ্দিনের উপযুক্ত পরামর্শ ও এক্সপ্লোরেশন নেচার একাডেমির সহায়তা ছাড়া এই অভিযান সম্ভব ছিল না। আমার স্বামী ও ছেলেও এই অভিযানে উৎসাহ জুগিয়েছে। ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের স্বীকৃতি সাফল্যের আনন্দকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিল।”
এই দুই মহিলার দুঃসাহসিক ও অনুপ্রেরণামূলক পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, সঠিক ইচ্ছাশক্তি এবং সহযোগী মনোভাব থাকলে যেকোনো প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব। বাঁকুড়ার এই দুই কন্যা নিঃসন্দেহে রাজ্যের অন্যান্য নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবেন।
আরও পড়ুন: ৪১০ কিমি জলপথ অভিযান সম্পন্ন: এনসিসি ন্যাভাল ক্যাডেটদের ফরাক্কা থেকে কলকাতা যাত্রা






[…] […]